কলকাতা : সোমবার ধর্মতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের ‘ভাষা আন্দোলন’-এর মঞ্চটি খুলে দিল সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর যুক্তি, এই মঞ্চটি স্থাপনের অনুমতি কেবল ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ছিল। নির্ধারিত সময়সীমা পার হওয়ার পরেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
অভিযোগ, অন্যান্য রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষীদের ‘বাংলাদেশি’ ভেবে হয়রানি করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা, বোলপুর এবং ঝাড়গ্রাম সহ অনেক জেলায় রাস্তায় নেমে সমাবেশ করেছেন। রাজ্য সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্য করার জন্য ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্প শুরু করেছে। এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে, তৃণমূল নেতারা সপ্তাহে দু’দিন ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির কাছে রিলে ধর্না করছিলেন এবং সেখানে ‘ভাষা আন্দোলন’ মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল।
সোমবার হঠাৎ করেই সেনাবাহিনীর কর্মীরা মঞ্চটি সরিয়ে ফেলতে আসেন এবং পুরো কাঠামোটি সরিয়ে ফেলেন। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র উইং কমান্ডার হিমাংশু তিওয়ারি বলেন যে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও, প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঘিরে রাখার কোনও মানে হয় না।
বিজেপি সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করছে, ক্ষোভ প্রকাশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
বিজেপি সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছে। সোমবার মেয়ো রোডে গিয়ে ভাষা আন্দোলনের মঞ্চ খোলা নিয়ে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব রয়েছে পুলিশের হাতে। তাই মঞ্চ নিয়ে সমস্যা থাকলে পুলিশকে জানাতে হত। অভিযোগ, সোমবার দুপুরে, কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ সেনা আধিকারিকরা তৃণমূলের ভাষা আন্দোলনের মঞ্চ খুলে দেন। এরপরই সরব হয় তৃণমূল, মেয়ো রোডে ছুটে যান মমতা।
দেশ জুড়ে ভাষা সন্ত্রাস চলছে, এমন অভিযোগ তুলে ভাষা আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার ও রবিবার করে চলছিল সেই প্রতিবাদ কর্মসূচি। সেই মঞ্চই সেনা খুলে দিয়েছে বলে অভিযোগ। সেনাবাহিনীর দাবি, তৃণমূল যে সময়ের জন্য এই মঞ্চের অনুমতি নিয়েছিল, তা উত্তীর্ণ হয়েছে। এছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলিতে এই মঞ্চ রাখা নিয়ে আপত্তি রয়েছে সেনার। সেনার উদ্দেশে মমতা বলেন, “আমাকে জানালেন না কেন? আমাকে একটা ফোন করলেই তো বলে দিতাম।”
সেনাবাহিনীকে বিজেপি ব্যবহার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আর্মিই শুধু বাকি ছিল। আর্মিকেও যদি মিস ইউজ করে, তাহলে সিকিউরিটি কোথায় থাকবে? একটা এজেন্সির নাম বলুন যারা নিরপেক্ষ? এরা সবাই বিজেপি পক্ষ।’ মমতা আরও বলেন, ‘আমি সেনাকে সম্মান করি, কিন্তু এই কাজ সেনাকে দিয়ে বিজেপি করেছে।’
ঘটনার পরই মঞ্চে ছুটে যান মমতা। তিনি বলেন, “আমি যখন আসছিলাম, তখন আমাকে দেখে প্রায় ২০০ সেনা ছুটে পালাল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা তো আমার বন্ধু। পালাচ্ছ কেন?” সেনাবাহিনীর দিকে কোনওভাবে দায় চাপাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, এই প্রোগ্রামের জন্য ২০ হাজার টাকা জমাও করেছে তৃণমূল। কোনও প্রোগ্রামও ছিল না অন্যদের। তাই মঞ্চ করা হয়েছে। মমতা বলেন, “অনুমতি ছাড়া ২১ জুলাইও করিনা। গান্ধীমূর্তির পাদদেশেও করতে দেবে না? রেড রোডেও অনুমতি দেবে না নাকি?” মমতার বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিবাদের মঞ্চ সরিয়ে দিতে চাইছে। এটা বিজেপি পার্টি করেছে। সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ থাকা উচিত।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, মেয়ো রোড থেকে সরিয়ে মঞ্চ তৈরি করা হবে রানি রাসমণি রোডে। সে ব্যাপারে অনুমতিও নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “বিজেপির অনুমতি নিয়ে আমি কোনও কর্মসূচি করব না। আমার অনেক জায়গা আছে।”

