সিএবির অনুষ্ঠানে ধন্যধান্য অডিটোরিয়াম ধন্য ধন্য করল ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে

সিএবির সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই, তারাই পিছনের সারি থেকে তুললেন স্লোগান

মেঘনাদ

খেলা হবে। এ খেলার মাঠের স্লোগান নয়। রাজনৈতিক স্লোগান। রাজ্যের শাসক শিবির এখন এই স্লোগানেই মুখরিত করে তোলে রাস্তা-ঘাট। এবার কি সিএবি কর্তাদের মুখেও শোনা যাবে খেলা হবের স্লোগান। সেদিন আসতে কি আর খুব বেশি বাকি?

শনিবার ধনধান্য অডিটোরিয়ামে ছিল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল (সিএবি)র ঐতিহ্যবাহী বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। যে অনুষ্ঠানে প্রতিবারই মঞ্চ আলোকিত করে থাকতেন কোনও না কোনও আন্তর্জাতিক মানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার। আর দর্শকাসনের সামনের সারিতে দেখা যেত ক্রিকেটারদের নক্ষত্র সমাবেশ। আসতেন সিএবির দীর্ঘদিনের সদস্য থেকে ক্রীড়াপ্রেমী বিদগ্ধজনেরা। আর এবার যেন উলোটপুরান। মঞ্চ আলো করে রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীরা। আর দর্শকাসনের পিছনের সারিতে সারিবদ্ধ রাজনৈতিক সদস্যরাই। না, কেউই অনুষ্ঠান দেখতে আসেননি। সেটা উদ্দেশ্যও নয় তা স্পষ্ট হয়ে গেল দফায় দফায় রাজনৈতিক স্লোগানে। অনুষ্ঠান চলাকালীনই কখনও শোনা গেল তাদের মুখে জয় বাংলা স্লোগান আবার কখনও শোনা গেল জয় ফিরহাদ হাকিম স্লোগান। মঞ্চে তখন আলো করে সিএবি সভাপতি রয়েছেন স্লেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। দফায় দফায় স্লোগানে মুখরিত ধনধান্য ধন্য ধন্য করে উঠল দুই মন্ত্রীকে দেখেই। সঞ্চালক থামানো তো দূর অস্ত, ধন্যবাদ জানালেন বিনয়ী স্বরেই।

সিএবিতে আসন্ন নির্বাচন। তারজন্যই কি তৃণমূলের শরণাপন্ন কর্তারা? তারজন্যই কি খিদিরপুর-চেতলার মতো জায়গা থেকে আসা যে কোনও লোককেই সাদরে আপ্যায়ন? সিএবিতে স্বশাসিত সংস্থা। সেখানে কীভাবে এই অনুপ্রবেশ? গুটিকয়েক তাঁবেদারি করা সাংবাদিক গিয়েছিলেন অনুষ্ঠান কভার করতে। তাদের যতটা মন অনুষ্ঠানে, তার থেকেও বেশি নজর অনুষ্ঠান শেষে খাবারের প্যাকেটে যেন। কেউই এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না। তোলার সাহসও দেখান না। এই অনুষ্ঠানেই উপস্থিত ছিলেন গঙ্গোপাধ্যায়দের দুই ভাইও। একজন বর্তমানে সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় অন্যজন আসন্ন নির্বাচনে দাঁড়াবেন বলে কথা দেওয়া সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁরা কি কেউই জানেন না, সিএবির ভিতরে শোভা পায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিও। অথচ অতীতে কখনও কোনও খেলার সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, কোনও ক্রীড়ামহলে শাসক পদেও ছিলেন না। তবু তাঁকেই এক বিশেষ কর্তার ঘরে ছবি আকারে টাঙানো রয়েছে। কিন্তু কেন?

অতীতে কেউ কখনওই এমন নিদর্শন দেখাতে পারবেন না, সরাসরি কোনও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সিএবিকে বিকিয়ে যেতে। অন্যতম ক্রীড়াপ্রেমী, যাঁকে খেলার প্রায় সব অনুষ্ঠানেই দেখা যায়। খেলা হলেই হাজির হয়ে যান সেই রাজনৈতিক ব্যক্তি তাপস রায়ও অবাক এমন ঘটনায়। নিজেই বললেন, গত ৪৭-৪৮ বছর ধরে সিএবিতে যাচ্ছি। বিশ্বনাথ দত্ত থেকে একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গেও দারুণ সখ্যতা ছিল। কিন্তু প্রত্যেকেই রাজনীতির রঙ লাগতে দিতেন না। তিনি বলেন, ‘এবার হবে কেন? কোনওদিন হয়নি। সিএবির কোনও অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জিন্দাবাদও হয়নি। সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের আমলেও তা হয়নি। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পছন্দের একজনকে বসাতে চেয়েছিলেন বলে দলমত নির্বিশেষে গর্জে উঠছিল ক্রীড়াপ্রেমীরা। আর এখন নবান্নে বসেই সিএবির পদে কে বসবেন তা ঠিক হয়ে যায়। (উল্লেখ্য, জগমোহন ডালমিয়ার প্রয়াণের পর নবান্ন থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, সিএবিতে সভাপতি হবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আর সচিব হবেন অভিষেক ডালমিয়া)। তা নিয়ে কোনও প্রতিবাদের ঝড় ওঠেনি। এবারেও ন্যক্করজনক ঘটনায় কোনও প্রতিবাদই হবে না।

বিরোধী নেতা অর্জুন সিংও তোপ দাগেন এমন ঘটনায়। তাঁর সাফ কথা, খেলাতেও থাবা বসাচ্ছে এখন তৃণমূল। মোহনবাগান থেকে মহমেডান, আইএফএ থেকে সিএবি, বিওএ সব জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে। খেলাতে রাজনীতির রঙ ছড়িয়ে কলুসিত করছে খেলার মাঠ।’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একহাত নিয়ে তাপস রায় ক্ষুব্ধ হয়েই বলেন, বিসিসিআই- আইসিসিতে অমিত শাহের ছেলে জয় শাহ যাওয়ায় নানা মন্তব্য করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। অথচ বাংলার খেলাধুলোয় তাঁর বড়ো ভাই ও ছোট ভাই ক্রমশ গ্রাস করে নিচ্ছে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, আইএফএ। তা নিয়ে একটা কথাও বলেন না। খেলার মান কতটা বাড়ছে অযোগ্যদের বসিয়ে তা বোঝাই যাচ্ছে। অর্জুন সিং বলেন, ক্রমশ কুক্ষিগত করে নিতে চাইছে তৃণমূল। এতদিন সিএবিটা তবু নিরপেক্ষ ছিল, রাজনৈতিক নেতারা খেলা দেখতেই যেতেন। এখন গিয়ে চেয়ারে বসে পড়বেন। বাকি খেলাগুলোর মতো এটাও শেষ হয়ে যাবে।

তাপস রায় আরও বলেন, ‘ক্রী়ড়াঙ্গনটাকেও রাজনীতির আখড়া করে দিচ্ছে।এখন তো ক্রীড়ামন্ত্রীর ভাই স্বরূপ বিশ্বাস, সেও আইএফএতে ঢুকে পড়েছে। পুরো রাজ্যটাই শেষ করে দিচ্ছে। তৃণমূল জানেই না, সিএবির গরিমা, ঐতিহ্য। জয় বাংলা স্লোগানে ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে মানসম্মান’! সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় তারাই তো চালাচ্ছেন সিএবি। ক্ষুদে ক্রিকেটারদের না ডেকে, দর্শকাসনে স্লোগানপার্টিকে তোয়াজ করে কী লাভ হল, তারাই বলতে পারবেন। নিশ্চয়ই সদুত্তর দেবেন বর্তমান সিএবি সভাপতি। নাকি এসব তুচ্ছ ঘটনা তাঁর কাছে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − 1 =