এশিয়া কাপকে ঘিরে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ সবসময়ই আলাদা মাত্রা পায়। ২০২৫ সালের আসরও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এবারের টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন ভারতের প্রাক্তন ওপেনার বীরেন্দ্র শেহবাগ। কারণ, সোনি স্পোর্টস নেটওয়ার্ক সম্প্রতি যে বিজ্ঞাপনী প্রোমো প্রকাশ করেছে, তাতে শেহবাগকে দেখা গিয়েছে ভারত–পাক ম্যাচ প্রচার করতে। আর এই ঘটনাই নেটিজেনদের একাংশের কাছে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ক’দিন আগেই জম্মু–কাশ্মীরের পহেলগাঁও এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় শহিদ হয়েছেন বহু জওয়ান। সেই ঘটনার প্রতিবাদে লেজেন্ডস লিগ ক্রিকেটে ভারতীয় কিংবদন্তিরা পাকিস্তানের লেজেন্ডদের বিরুদ্ধে খেলতে নামেননি। যুবরাজ সিং, শিখর ধাওয়ান, ইরফান পাঠান, হরভজন সিংয়ের মতো তারকারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ বয়কট করেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, যখন সন্ত্রাসবাদে আমাদের দেশ ক্ষতিগ্রস্ত, তখন পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ক্রিকেট খেলা মানায় না।
এই আবহেই শেহবাগকে প্রোমোতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রচার করতে দেখা যায়। তিনি বিজ্ঞাপনে বলেন, ভারতই এশিয়া কাপে সবচেয়ে শক্তিশালী দল। সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বে দল দুর্দান্ত পারফর্ম করবে। টি২০ বিশ্বকাপ জেতার পর ভারতীয় দল আত্মবিশ্বাসী, তাই এশিয়া কাপও জিতবে বলে আশাবাদী তিনি। শেহবাগের এই বক্তব্যে ক্রিকেটের স্বাভাবিক আবহ ফুটে উঠলেও নেটদুনিয়ার একাংশ তা একেবারেই মেনে নেয়নি।
নেটিজেনদের অভিযোগ, এত তাড়াতাড়ি পহেলগাঁও হামলার ক্ষত ভুলে শেহবাগ কীভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ প্রচার করতে পারলেন? কেউ কেউ তাঁকে সরাসরি বয়কটের ডাক দিয়েছেন। আবার কেউ সোনি নেটওয়ার্ককেও বয়কট করার দাবি তুলেছেন। তাঁদের মতে, যখন পাকিস্তান নিজের হকি দল ভারত সফরে পাঠাতে অস্বীকার করেছে, তখন ভারতেরও উচিত ক্রিকেট মঞ্চে সম্পর্ক ছিন্ন করা।
অন্যদিকে, অনেকের মত, ক্রিকেটকে রাজনীতির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। ক্রিকেটপ্রেমীরা বহুদিন ধরেই ভারত–পাক লড়াইয়ের অপেক্ষায় থাকেন। এশিয়া কাপে যদি ভারত পাকিস্তানের মুখোমুখি না হয়, তবে অর্থনৈতিক ক্ষতি যেমন হবে, তেমনই আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও বিসিসিআইকে সমস্যায় পড়তে হবে। তাই ভারতীয় বোর্ড শেষ পর্যন্ত দল নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সবমিলিয়ে, একদিকে পহেলগাঁও হামলার প্রতিবাদ, অন্যদিকে ক্রিকেট কূটনীতির বাস্তবতা—এই দ্বন্দ্বে শেহবাগের প্রচার যেন নতুন করে বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলেছে। ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হচ্ছে এশিয়া কাপ। ভারতের প্রথম ম্যাচ ১০ সেপ্টেম্বর, আর ১৪ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে হবে বহু প্রতীক্ষিত ভারত–পাকিস্তান দ্বৈরথ। ক্রিকেটপ্রেমীরা যেমন উত্তেজনায় দিন গুনছেন, তেমনই সামাজিক মাধ্যমে চলছে তীব্র বিতর্ক—ক্রিকেট আর সন্ত্রাসবাদ একসঙ্গে চলতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন নিয়েই দেশ জুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে।

