সুজিত ভট্টাচার্য
শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টির জন্য অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয় রান্না করা খাবার। বুধবার ‘সাপ’ সহ খিচুড়ি রান্না হয় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের বাগকালাপাহাড় গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। আর সেই খিচুড়ি খেয়েই ভয়ে আতঙ্কে অসুস্থতা অনুভব করতে শুরু করে শিশুরা। চিকিৎসার জন্য দুপুরে ছয় শিশুকে নিয়ে আসা হয় জামালপুর ব্লক হাসপাতালে। এই ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়েই ব্লকের বিডিও ও সিডিপিও জামালপুর ব্লক হাসপাতালে ছুটে গিয়ে শিশুদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেন। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জামালপুর ব্লকের পাড়াতল ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম বাগকালাপাহাড়। শিশু ও গর্ভবতী মিলিয়ে ওই গ্রামের ১৩৬ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে পুষ্টিদায়ক খাবার পাওয়ার জন্য ৫৪ জনের নাম নথিভুক্ত রয়েছে। তাঁরা মূলত খোরদোপলাশি, কাঠালডাঙা ও বাগকালাপাহাড় গ্রামের বাসিন্দা। অন্যান্য দিনের মতো বুধবারও ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খিচুড়ি রান্না হয়। বেলা ১০টার মধ্যে রান্না শেষ হলে শিশু ও গর্ভবতীদের খিচুড়ি দিয়ে দেওয়া হয়। তারা খিচুড়ি নিয়ে নিজেদের বাড়িতে চলে যান। ঘরে বসে খিচুড়ি খেতে গিয়ে এক শিশুর অভিভাবক দেখেন তার শিশুটির থালার খিচুড়িতে একটি লম্বা কিছু পরে আছে। তিনি দেখেন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে দেওয়া গরম খিচুড়ির মধ্যে একটি ‘মরা সাপের বাচ্চা’ রয়েছে। এমনটা দেখেই ওই শিশু ও তাঁর পরিবারের লোকজন আঁতকে ওঠেন। তাঁরা ছুটে গিয়ে গ্রামের অন্য শিশুর পরিবার ও গর্ভবতীদের বিষয়টি জানান। খিচুড়ি না খাওয়ার জন্যে তাঁদের বলেন। ততক্ষণে যে যে শিশুরা খুচুড়ি খেয়ে ফেলেছিল তাঁদের অভিভাবকরা ঘটনার কথা জেনে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ভয়ে আতঙ্কে বেশকিছু শিশু অসুস্থ বোধ করে।
দুপুরে তাদের জামালপুর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকরা শিশুদের শারীরিক অবস্থা খতিয়ে বেশ কিছু সময় তাদের অবজারভেশনে রাখেন। বেশ কিছুক্ষণ অবজারভেশনে রেখে তাদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালে আসা এক শিশুর মা গৌরি মুদি জানিয়েছেন, তাঁদের বাগকালাপাহড় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যে খিচুড়ি রান্না হয়েছিল তাতে সাপের বাচ্চা ছিল। ওই সাপ সহ রান্না খিচুড়ি সবাইকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়। অজান্তে সেই খিচুড়ি তিনি ও তার বাচ্চা খাওয়া শুরু করেন। খেতে খেতেই হঠাৎ থালায় গোটা সাপের বাচ্চা দেখতে পান। এরপরই দ্রুত শিশু সন্তানকে নিয়ে জামালপুর হাসপাতালে ছুটে যান তারা। শিশুদের সঙ্গে এদিন দুপুরে হাসপাতালেই ছিলেন ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মী জ্যোৎস্না ঘোষ। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রের খিচুড়ি রান্না করার সময়ে তাতে আস্ত একটা সাপের বাচ্চা কখন পড়ে যায় তা কারোর নজরে আসেনি। সাপ সহ খিচুড়ি রান্না হয়ে যাবার পর সেন্টারের শিশু ও প্রশুতিদের তা বিতরণও করে দেওয়া হয়। পরে লক্ষ করা গেছে খিচুড়িতে সাপ রয়েছে। আট জন শিশু ওই খিচুড়ি খেয়ে ফেলে ছিল। তাঁদের হাসপাতালে পাঠিয়ে বাকিদের খিচুড়ি না খাওয়ার জন্য এলাকায় খবর পাঠানো হয়। জামালপুর হাসপাতালের বিএমওএইচ ঋত্বিক ঘোষ জানান, শিশুদের তেমন কোনও অসুস্থতা দেখা যায়নি। তবুও ছয় শিশুকে বেশ কিছুটা সময় অবজারভেশনে রাখার পর ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার জানান, শিশুদের বড় কোন বিপদ হয়নি, এটাই রক্ষের। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে ১৩৬ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা কাউকে কিছু না জানিয়ে এদিন কেন্দ্রে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি এলাকার অন্য একজনকে এদিনের রান্নার জন্য দায়িত্ব দিয়ে যান। এটা সহায়িকা করতে পারেন না। কেন্দ্রের দিদিমণিরও তাকে রান্না করতে দেওয়া ঠিক হয়নি। সেই জন্য ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সবাইকে শো-কজ নোটিস ধরানো হয়েছে। শো-কজের উত্তর সন্তোষজন না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান বিডিও।
আইসিডিএস এর জেলা প্রকল্প আধিকারিক পাপিয়া হালদার চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘এই ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। কারওর কোনও গাফিলতি রয়েছে কি না, সেটাও দেখা হচ্ছে।’
এসডিও (বর্ধমান দক্ষিণ) কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল জানিয়েছেন, ‘সিডিপিও একটি রিপোর্ট দিচ্ছে। ওই রিপোর্ট দেখেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হবে।’ অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘মহকুমাশাসক কথা বলেছেন। তাঁর কাছ থেকে একটা রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ওই রিপোর্ট জেলাশাসকের কাছে পেশ করা হবে।’