ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে অনিশ্চয়তার মেঘ, ভিন্ন সুর গাভাসকর-আকরমের !

পহেলগাঁও হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক কোন খাতে বইবে, তা নিয়ে ফের নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ইতিমধ্যেই ঘোষণা হয়েছে যে আসন্ন এশিয়া কাপে ১৪ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে মুখোমুখি হওয়ার কথা ভারত ও পাকিস্তানের। কিন্তু সেই ম্যাচ আদৌ হবে কি না, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে জল্পনা।

সম্প্রতি ভারতীয় দলের নির্বাচনী বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রসঙ্গ উঠে আসে। তবে ভারতীয় দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব বা নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকরকে প্রশ্নের জবাব দিতে হয়নি। বিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি সাফ জানিয়ে দেন, “যদি দল নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকে, তাহলে সেটাই করুন।” এরপর ভারত-পাক ম্যাচ নিয়ে আর কোনও প্রশ্ন ওঠেনি।

এই বিতর্কে সাবেক ভারত অধিনায়ক সুনীল গাভাসকর বেশ সতর্ক মন্তব্য করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “এ বিষয়ে সবকিছু সরকারের উপর নির্ভর করছে। যদি সরকার অনুমতি দেয়, তাহলে খেলা হবে। আর সরকার না চাইলে বিসিসিআই সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে ক্রিকেটারদের কিছু করার নেই। ফলে সরকারী সিদ্ধান্তকেই মান্য করতে হবে।” গাভাসকরের মতে, এই অবস্থায় প্লেয়ারদের সমালোচনা করাও ঠিক নয়।

অন্যদিকে পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আক্রম ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, “এশিয়া কাপের সূচি অনেক আগেই ঠিক হয়েছে। পাকিস্তানে কেউ এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। ভারত খেললে ভালো, না খেললেও কোনও অসুবিধা নেই। তবে আমি মনে করি, ম্যাচটা হওয়া উচিত। বরং আমি ভারত-পাকিস্তানের টেস্ট সিরিজ ফিরতেও দেখতে চাই। আমি রাজনীতিবিদ নই। সবাই দেশের কথা ভাবে, তবে কাজের মাধ্যমে দেখানোই আসল।”

এর আগে লেজেন্ডস লিগ ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বাতিল হয়ে যায়। সেমিফাইনালে শহিদ আফ্রিদির দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামেননি যুবরাজ সিং, শিখর ধাওয়ানদের মতো ভারতীয় তারকারা। সেই ঘটনার পর থেকেই ভারত-পাক ক্রিকেটীয় সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এশিয়া কাপে ভারত-পাক ম্যাচ আসলেই হবে কি? রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়ে এমন ম্যাচের উপর, তা আগেও বহুবার দেখা গেছে। ২০০৮ মুম্বই হামলার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। শুধু বহুপাক্ষিক টুর্নামেন্টেই একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান।

ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে ভারত-পাক লড়াই সবসময়েই বিশেষ আবেগ জড়ানো। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সীমান্ত উত্তেজনার কারণে সেই আবেগকে প্রায়ই থামিয়ে দেয় কূটনৈতিক পরিস্থিতি। ফলে এশিয়া কাপে নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ১৪ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে ম্যাচ হওয়ার কথা থাকলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যে ভারতের সরকারের হাতেই, তা গাভাসকরের মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট।

অন্যদিকে ওয়াসিম আক্রমের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, পাকিস্তানের দিক থেকে কোনও চাপ নেই। তাঁরা চাইছেন খেলা হোক, বরং টেস্ট সিরিজ পর্যন্ত ফিরুক। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষে সরকারের অনুমতি ছাড়া এই ম্যাচে নামা সম্ভব নয়।

সব মিলিয়ে, ভারত-পাক ম্যাচ হবে কি হবে না—এই অনিশ্চয়তার মাঝেই এগোচ্ছে এশিয়া কাপ। তবে একথা নিশ্চিত, যদি খেলা হয়, তাহলে গোটা ক্রিকেট দুনিয়ার নজর থাকবে দুবাইয়ে সেই মহারণে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × one =