মহেশ্বর চক্রবর্তী
রাজা রামমোহন রায়ের পরবর্তীকাল। হুগলি জেলার খানাকুলের কৃষ্ণনগর গ্রাম তখন এখানের জমিদার ধরণী মোহন রায় বসবাস করেন। নিয়ম ছিল প্রতিবছর বিশেষ একদিন প্রজাদের খাজনা আদায়ের জন্য জমিদার কাছারিতে বসতেন। জমির ফসল খাজনার টাকা ইত্যাদি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমিদারের মন পেতে অনেকেই বাড়ির তৈরি বিভিন্ন মিষ্টান্ন হাতে করে নিয়ে আসতেন। এই দিনটিকে বলা হত ‘পূণ্যাহ’। এক বছর পূণ্যাহের দিন স্থানীয় এক ব্যক্তি অদ্ভুত একটি মিষ্টান্ন নিয়ে এলেন জমিদারের উপহার হিসেবে। কিছুটা খইয়ের মোয়ার মতো দেখতে হলেও সেটা মোয়া নয়। জমিদারের খুব পছন্দ হল সেই মিষ্টি। তিনি ডেকে পাঠালেন হালওয়াইকে। ‘এ কার কাণ্ড?’ দেখি তাকে একবার। মিষ্টান্নের নাম রাখা হল কারকাণ্ডা। দীর্ঘ সময় ধরে এই মিষ্টান্ন খানাকুল কৃষ্ণনগর এলাকার ঐতিহ্য বহন করে এসেছে। তখন কোনও অনুষ্ঠান বাড়ি বা অতিথি আপ্যায়নের ক্ষেত্রে কারকাণ্ডা না খাওয়ালে অতিথির মান থাকত না। কোনও অভিজাত বাড়ির লোক ভুলেও এই কাণ্ড করত না। এখন এই মিষ্টান্ন লুপ্তপ্রায়। কারণ এর মূল উপকরণ কনকচূড় ধানের খই এখন জোগাড় করা খুব কষ্টকর। এছাড়া জায়ফল, জয়িত্রী, সা-জিরে ইত্যাদি বহু রকমের মশলা এবং খাঁটি গাওয়া ঘি দিয়ে এই মিষ্টান্ন তৈরি করতে অনেক দাম পড়ে যায়। এখন সাধারণ মানুষ আর খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না এই মিষ্টান্নর ব্যাপারে। আজকের প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জিভের আসল স্বাদই পৌঁছল না। কিভাবে তারা এর কদর করবে? আফসোস, এলাকার বয়স্ক মানুষদের। এই বিষয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক তথা আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ দেবাশিস শেঠ জানান, এই মিষ্টি বাংলার গর্ব। কিন্তু বর্তমানে লুপ্তপ্রায়। স্বাদে অতলনীয়। এই প্রজন্মের কাছে ঠিকমতো পৌঁছচ্ছে না বলেই এর কদর কমছে। তবে সরকারি ভাবে এই প্রাচীন ঐতিহ্য মিষ্টিকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন।