ভারতের ক্রীড়া ইতিহাসে এক অনন্য নাম ভেস পেজ। প্রাক্তন হকি অলিম্পিয়ান, স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং বহু প্রজন্মের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকা এই কিংবদন্তি প্রয়াত হলেন ৮০ বছর বয়সে। তিনি ভারতের অন্যতম সেরা টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজের বাবা। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন ভেস। পারকিনসন রোগে ভুগছিলেন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ছেলের সঙ্গেই ছিলেন।
১৯৪৫ সালে গোয়ায় জন্মগ্রহণ করেন ভেস পেজ। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ছিল তাঁর অগাধ টান। স্কুল ও কলেজে পড়াকালীন হকি, ফুটবল, ক্রিকেট এবং রাগবিতে সমান দক্ষতা দেখিয়েছিলেন। ভারতের জাতীয় হকি দলে তিনি মূলত মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতেন।
ভেস পেজ ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিক্সে ভারতের হয়ে ব্রোঞ্জ জেতেন। এর আগের বছর বার্সেলোনায় আয়োজিত হকি বিশ্বকাপে ভারতকে ব্রোঞ্জ এনে দিয়েছিলেন। এই সাফল্য ভারতীয় হকি ইতিহাসের সোনালি অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।
হকি ছাড়াও ভেস রাগবির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ভারতের রাগবি ইউনিয়নের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারতে রাগবির প্রসারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছিল।
কলকাতায় মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা করার পর ভেস স্পোর্টস মেডিসিনে বিশেষজ্ঞ হন। তাঁর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান ভারতের ক্রীড়াক্ষেত্রে বহু অ্যাথলিটকে উপকৃত করেছে। খেলোয়াড়দের শরীরের চাহিদা, ইনজুরি এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল।
ভেস পেজ এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (ACC) ও বিসিসিআই-এর সঙ্গেও কাজ করেছেন। ডোপিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। ক্রীড়াবিদদের ডোপিংয়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে শিক্ষিত করার জন্য বহু কর্মশালা পরিচালনা করেছিলেন।
লিয়েন্ডার পেজ তাঁর টেনিস কেরিয়ারে বাবার অবদানের কথা বারবার উল্লেখ করেছেন। ছোটবেলায় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও বাবার অনুপ্রেরণায় টেনিসে আসেন।
ভেস পেজ শুধু একজন প্রাক্তন হকি খেলোয়াড়ই নন, বরং খেলাধুলার উন্নতির জন্য নিবেদিতপ্রাণ একজন অভিভাবক ছিলেন। তাঁর ক্রীড়াবিদসুলভ মনোভাব, চিকিৎসাবিদ্যা এবং প্রশাসনিক দক্ষতা একসঙ্গে মিলিতভাবে তাঁকে এক বিরল ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছিল। তাঁর প্রয়াণে ভারতীয় ক্রীড়াজগৎ এক অভিভাবককে হারাল।

