বিক্রি হচ্ছে লর্ডসের পিচ ! কিন্তু কেন ?

ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে লর্ডস মানেই আবেগ, ইতিহাস আর গৌরবের এক অনন্য মঞ্চ। এখানেই ১৯৮৩ সালে কপিল দেবের হাতে উঠেছিল ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফি। এখানেই ২০০২ সালে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজ জিতে সৌরভ গাঙ্গুলি স্টেডিয়ামের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জার্সি ওড়ানোর ঐতিহাসিক মুহূর্ত সৃষ্টি করেছিলেন। এমন এক মাঠের অংশ যদি সত্যিই নিজের করে নেওয়া যায়, তা হলে কেমন লাগবে? ঠিক এই স্বপ্নই জাগিয়ে তুলেছে লর্ডসের মালিক মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)।

এমসিসি সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, সাধারণ মানুষের জন্য লর্ডস পিচের টুকরো বিক্রি করা হবে। মাত্র ৫০ পাউন্ড (প্রায় ৫,০০০ টাকা ভারতীয় মুদ্রায়) দিয়ে কিনে নেওয়া যাবে পিচের ১.২ মিটার বাই ০.৬ মিটার আকারের একটি অংশ। আগে শুধু ২৫ হাজার ক্লাব সদস্যই এমন কিছু পাওয়ার সুযোগ পেতেন, এবার সেই সুযোগ মিলছে সাধারণ মানুষেরও। তবে শর্ত, আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে বিক্রি হবে এই বিশেষ স্মারক।

এমন সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে এমসিসি জানিয়েছে, লর্ডসের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিক্রির মোট অর্থের ১০ শতাংশ যাবে এমসিসি ফাউন্ডেশনে, যা তরুণ ও প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের উন্নয়নে কাজ করে। বাকি অর্থ সরাসরি স্টেডিয়ামের উন্নয়নের কাজে ব্যয় হবে। কর্তৃপক্ষের মতে, ভবিষ্যৎ ক্রিকেটের উন্নতির স্বার্থেই এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রায় দুই দশক ধরে লর্ডসে বড় ধরনের সংস্কার হয়নি। মাঠের আউটফিল্ড নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা অভিযোগ উঠেছে। ফলে সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে চলেছে ব্যাপক সংস্কারের কাজ। নতুন করে তৈরি হবে পিচ, যার জন্য মাঠের উপরের ১৫ মিলিমিটার মাটি তুলে ফেলা হবে। এই কাজ চলাকালীনও ম্যাচ আয়োজন অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে খেলাধুলায় বিরতি না পড়ে।

লর্ডসের প্রধান মাঠকর্মী কার্ল ম্যাকডারমট জানিয়েছেন, তাঁর পূর্বসূরি মিক হান্টের সময় মাঠ নতুন করে তৈরি করতে প্রায় তিন বছর সময় লাগত, আর খেলা বন্ধ থাকত। কিন্তু এখন ম্যাচের চাপ অনেক বেশি হওয়ায় তেমন দীর্ঘ বিরতি দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তারা চেষ্টা করবেন দ্রুত ও কার্যকর পদ্ধতিতে মাঠকে নতুন করে ক্রিকেটের উপযোগী করে তুলতে।

সব মিলিয়ে, লর্ডসের ইতিহাসের এক টুকরো হাতে পাওয়ার এই সুযোগ ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এক বিরল অভিজ্ঞতা হতে পারে। যাঁরা পিচের এই অংশ কিনবেন, তাঁদের জন্য এটি হবে শুধু একটি স্মারক নয়, বরং ক্রিকেট ইতিহাসের সঙ্গে নিজের নাম জুড়ে দেওয়ার গর্বের বিষয়। এমন সুযোগ হাতছাড়া করা বোধহয় কোনো প্রকৃত ভক্তের পক্ষেই সম্ভব নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 1 =