রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সঙ্গে চেন্নাই সুপার কিংসের সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটতে চলেছে বলে জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে আইপিএল মহলে। দীর্ঘ সাত বছর চেন্নাইয়ের জার্সিতে খেলার পর তিনি একসময় পাঞ্জাব কিংস, দিল্লি ক্যাপিটালস এবং রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু ২০২৫ সালের মেগা নিলামে চমকপ্রদভাবে ৯.৭৫ কোটি টাকায় মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বাধীন সিএসকে তাঁকে ফের দলে ভেড়ায়। এক দশক পর পুরনো ঘরে ফিরে আসার গল্পটি সমর্থকদের মনে উত্তেজনা জাগালেও, সেই অধ্যায় হয়তো খুব দ্রুত শেষ হয়ে যেতে চলেছে।
আন্তর্জাতিক এক ক্রিকেট ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, অশ্বিন সিএসকে অ্যাকাডেমির অপারেশনস ডিরেক্টরের পদ থেকেও সরে দাঁড়াতে চান। গত এক বছর ধরে তিনি এই দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, অন্য কোনও আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা থাকায় তিনি স্বার্থের সংঘাত এড়াতেই এই পদ ছাড়বেন। কারণ, ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে অফিসিয়াল পদে যুক্ত থেকে অন্য দলে খেলা নীতিগত সমস্যার কারণ হতে পারে। যদিও সিএসকে ছাড়ার সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও প্রকাশ্যে আসেনি, তবে পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে সিদ্ধান্তটি শুধুমাত্র প্রশাসনিক নয়, মাঠের পারফরম্যান্সের সঙ্গেও জড়িত।
গত মরশুমে সিএসকে’তে ফিরে এলেও অশ্বিন প্রত্যাশা মতো পারফরম্যান্স করতে পারেননি। মোট ৯টি ম্যাচে বল হাতে তিনি নিয়েছেন মাত্র ৭টি উইকেট, গড় ছিল ৪০.৪৩;যা টি২০ ফরম্যাটে একেবারেই সন্তোষজনক নয়। সিএসকে-র মতো প্রতিযোগিতামূলক দলে যেখানে প্রতিটি খেলোয়াড়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে এমন পারফরম্যান্স স্বাভাবিকভাবেই ম্যানেজমেন্টকে হতাশ করেছে। জানা গিয়েছে, অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড় এবং প্রাক্তন অধিনায়ক এমএস ধোনি গত কয়েকদিন ধরে আগামী মরশুমের দলগঠন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁদের পরিকল্পনায় অশ্বিনের জায়গা ছিল কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।
ক্রিকেটমহলের অনেকের মতে, বাদ পড়ার সম্ভাবনা আঁচ করেই অশ্বিন আগে থেকেই সিএসকে ছাড়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে, সিএসকে ম্যানেজমেন্টও হয়তো অভিজ্ঞ এই স্পিনারকে ট্রেড করে দেওয়ার বা নিলামের জন্য ছেড়ে দেওয়ার পথ খুঁজছে। যদি ট্রেড হয়, তাহলে কোনও দল সরাসরি তাঁকে কিনতে পারবে; আর নিলামে গেলে বাজারে তাঁর দাম ও চাহিদা অনুযায়ী গন্তব্য ঠিক হবে।
চেন্নাই সুপার কিংসের সঙ্গে অশ্বিনের সম্পর্ক বহুদিনের। দলের হয়ে অসংখ্য ম্যাচ জেতানোর স্মৃতি রয়েছে তাঁর। তাই সমর্থকদের কাছে এই সম্ভাব্য বিচ্ছেদ কিছুটা আবেগঘনও বটে। তবে পেশাদার ক্রিকেটে ফর্ম ও পারফরম্যান্সই শেষ কথা, এবং আইপিএলের মতো প্রতিযোগিতায় প্রতিটি সিজনই নতুন করে নিজেকে প্রমাণ করার মঞ্চ। অশ্বিন যদি সত্যিই সিএসকে ছাড়েন, তাহলে দেখা যাবে নতুন দলে তিনি কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। একদিকে অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে সাম্প্রতিক ফর্ম;এই দুইয়ের লড়াইতেই ঠিক হবে তাঁর ভবিষ্যৎ।
সব মিলিয়ে, সিএসকে-অশ্বিন অধ্যায় শেষের পথে কিনা, তার উত্তর হয়তো আসন্ন কিছু সপ্তাহেই মিলবে। কিন্তু এই খবর ইতিমধ্যেই সমর্থকদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে, এবং আগামী মরশুম শুরুর আগেই আইপিএল বাজারে যে বড়সড় অদলবদল দেখা যেতে পারে, তার অন্যতম নজরকাড়া উদাহরণ হতে পারেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন।

