শেষ দিনে ভারতের চাই ৪ উইকেট, ইংল্যান্ডের দরকার ৩৫ রান

ওভাল টেস্টে যে পঞ্চম দিনে গিয়ে সিরিজের ভাগ্য নির্ধারিত হবে, তা কেউ ভাবেনি। তৃতীয় দিনের শেষে স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল, ম্যাচের রাশ ভারতের হাতে। চতুর্থ দিনের শুরুতেও ভারতের বোলাররা ছন্দে থেকে ইংল্যান্ডকে চাপে রাখেন। কিন্তু খেলার চিত্রনাট্য হঠাৎই বদলে গেল। হ্যারি ব্রুক এবং জো রুটের দুর্দান্ত ব্যাটিং ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিল। ইংল্যান্ড চলে গেল চালকের আসনে। তখন মনে হচ্ছিল, চা বিরতির একটু পরেই বেন স্টোকসের দল জিতে নেবে ম্যাচ ও সিরিজ। কিন্তু ক্রিকেট তো অনিশ্চয়তার খেলা। আবারও নাটক দেখা গেল চতুর্থ দিনের শেষ দিকে। ভারতের পেসাররা নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দিয়ে দলকে ম্যাচে ফেরান। কিন্তু তখনই শুরু হয় বৃষ্টি। ফলে শেষ দেড় ঘণ্টার খেলা আর সম্ভব হয়নি। পঞ্চম দিনে হবে এই নাটকীয় টেস্টের ফয়সালা।

এখন দুই দলই জয়ের খুব কাছাকাছি। ইংল্যান্ডের দরকার মাত্র ৩৫ রান, আর ভারতের প্রয়োজন মাত্র ৪ উইকেট। চতুর্থ দিনের শুরুতে ভারত এগিয়ে ছিল। ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৩২৪ রান, আর ভারতের দরকার ছিল ৮ উইকেট। সবুজ উইকেটে এত বড় রান তাড়া করা চ্যালেঞ্জিং ছিল। প্রথম সেশনেই বেন ডাকেট ও ওলি পোপকে ফিরিয়ে সেই চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন করে তোলেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ও মহম্মদ সিরাজ। ১০৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। ঠিক সেই সময় ব্রুকের একটি পুল শট ব্যাটের কানায় লেগে হাওয়ায় উঠে যায়। বাউন্ডারির অনেকটা আগে দাঁড়িয়ে ছিলেন সিরাজ, ক্যাচ নিতে গিয়ে তিনি বাউন্ডারির দড়ি পার করে ফেলেন। ছয় হয়ে যায় সেই বল। সেটাই ম্যাচের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। সেই ভুলের সুযোগ নিয়েই পাল্টা আক্রমণে যান ব্রুক। একের পর এক বড় শট খেলতে থাকেন। রান ওঠে দ্রুত, ভারত খেই হারায়। অন্যদিকে, ঠান্ডা মাথায় নিজের কাজ করে যান জো রুট।

তিনিও দেখিয়ে দেন কেন তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার। ব্রুক ঝড় তুললেও রুট ধরে রেখে ইংল্যান্ডের ইনিংস গড়ে তোলেন। দু’জনে মিলে গড়ে তোলেন ১৯৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। আইসিসির টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে এক ও দুই নম্বরে থাকা এই দুই ব্যাটার দেখিয়ে দিলেন কেন তাঁরা সেরাদের তালিকায়। চা বিরতির আগে ব্রুক তাঁর শতরান পূর্ণ করেন। বিরতির পরেও তাঁকে থামানো যাচ্ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত আকাশদীপের বলে ক্যাচ দিয়ে ৯৮ বলে ১১১ রানে ফিরলেন তিনি। সিরাজই এই বার তাঁর ক্যাচ লুফে নেন। কিন্তু তখন ইংল্যান্ড পৌঁছে গিয়েছে ৩০১ রানে। তখন তাঁদের দরকার আর মাত্র ৭৩ রান, হাতে ছিল ৫ উইকেট। চা বিরতির পর ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৫৭ রান। মনে হচ্ছিল, খুব দ্রুতই সেই রান তুলে নেবে তারা। কিন্তু ভারতের পেসাররা হাল ছাড়েননি। আগ্রাসী বোলিং চালিয়ে যান তাঁরা। প্রতিটা রান আটকে রাখার চেষ্টায় সফল হন। এই চাপেই বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হন জেকব বেথেল। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সাজঘরে ফেরেন জো রুট। ইংল্যান্ডের দুই সেট ব্যাটার আউট হয়ে যাওয়ায় ভারতের আশা আবার জেগে ওঠে।

ঠিক সেই সময়ই বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রকৃতি। শুরু হয় বৃষ্টি। কিছু ক্ষণের মধ্যে বৃষ্টি থেমে গেলেও মাঠে জল জমে যাওয়ায় খেলা আর শুরু করা যায়নি। আম্পায়াররা দু’দলকে জানিয়ে দেন, দিনের খেলা আর হবে না। ফলে টেস্ট ও সিরিজের ফলাফল নির্ধারণ হবে সোমবার পঞ্চম দিনে। ভারতের জন্য এই বিশ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চতুর্থ দিনে টানা বল করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন তিন পেসার;প্রসিদ্ধ, সিরাজ ও আকাশদীপ। এবার তাঁরা পুরো বিশ্রাম নিয়ে সোমবার তরতাজা হয়ে নামতে পারবেন। আরও একটি সুবিধা ভারতের;আর তিন ওভার পরেই দ্বিতীয় নতুন বল পাওয়া যাবে। সেটা কাজে লাগাতে পারলে, দ্রুত চার উইকেট তুলে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের রান দরকার মাত্র ৩৫। হাতে রয়েছে অলরাউন্ডার ও টেলএন্ডাররা। যদিও তারা ব্যাটে অতটা দক্ষ নয়, তবু রান খুব বেশি নয়, এটাও বড় সুবিধা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − thirteen =