সিঁদুরের প্রতিশোধ সিঁদুরেই : পহেলগাঁও-র রক্তপাতের ঠিক পনেরো দিনের মাথায় জঙ্গি ঘাঁটিতে নিখুঁত আঘাত ভারতের।

নয় নয় করে নয়টি নিশানায় আঘাত। কোনও সামরিক ঘাঁটিতে নয়, আঘাত সরাসরি জঙ্গি শিবিরেই। অপারেশন ‘সিঁদুর’-এ পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মাটিতে ভারতীয় সেনার নিশানার তির এই বার্তাই দিল—পাহলগামের রক্তে সিঁদুর মুছেছিলো, এবার সেই সিঁদুরই জবাব দিল আগুনে।

বুধবার রাত ১টা ৪৪ মিনিটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়, “অপারেশন সিঁদুর”-এর মাধ্যমে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ভূখণ্ডে অবস্থিত জঙ্গি পরিকাঠামোয় নিখুঁত হামলা চালানো হয়েছে।

 

মোট নয়টি স্থানে আঘাত, যেখান থেকে ভারতবিরোধী জঙ্গি হামলার ছক কষা হচ্ছিল বলে কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি। বলা হয়েছে, “এই পদক্ষেপ পরিকল্পিত, মাপা এবং উত্তেজনাহীন। পাকিস্তানের কোনও সেনাঘাঁটি এই হামলার লক্ষ্য হয়নি।”

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এ-ও জানায়, “আমরা লক্ষ্য নির্ধারণ ও আক্রমণ-পদ্ধতি বেছে নিতে যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছি।” অর্থাৎ অপারেশন সিঁদুর কোনও যুদ্ধঘোষণা নয়, বরং অস্ত্রের ভাষায় সুনির্দিষ্ট বার্তা।

 

সেই বার্তা পাহলগামের মৃতদের উদ্দেশে। সেই ঘটনায় ২৫ জন ভারতীয় ও ১ জন নেপালি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল। সেনা সূত্রের বক্তব্য, “এই রক্তের দায় যাঁদের, তাঁরা কেউ রেহাই পাবেন না—এই ছিল প্রতিশ্রুতি। আজ তা বাস্তব।”

 

এই হামলার পরে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, পুরনো ভারতের মতো এখন আর শুধু শোকপালন নয়, ‘নয়া ভারত’ প্রতিবার রক্তের প্রতিদানে প্রতিশোধের অধিকার রাখে—সুনির্দিষ্ট, নিশ্ছিদ্র ও কৌশলীভাবে।

 

সূত্রের খবর, ভারতীয় বায়ুসেনা এবং বিশেষ বাহিনী যৌথভাবে এই অভিযানে অংশ নেয়। যদিও কোথায় কোথায় হামলা চালানো হয়েছে, কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে সরকারি স্তরে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার একটি পূর্ণাঙ্গ ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।

‘অপারেশন সিঁদুর’ নামটি নিয়ে প্রতিরক্ষা সূত্র বলছে, “এটি প্রতীকী—সিঁদুর যেমন জীবনের প্রতীক, তেমনই দেশের গায়ে আঁকা সিঁদুরে রক্ত লাগলে তা ধুয়ে ফেলার দায় সেনার।”

 

আন্তর্জাতিক স্তরে এই হামলার কী প্রতিক্রিয়া হয়, পাকিস্তান এই আগুনকে কতটা নাড়িয়ে দিতে পারে, এখন তার দিকেই তাকিয়ে কূটনৈতিক দুনিয়া। তবে ভারত এই মুহূর্তে যে ঘরে বসে গাল নয়, সীমান্তে গিয়ে জবাব দিতে প্রস্তুত—সেটাই বুঝিয়ে দিল এই প্রত্যাঘাত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six − 6 =