হাজারো বিপ্লবীর পদধূলি সমৃদ্ধ হুগলির বিদ্যামন্দির ভবন শতবর্ষে ধুলোয় মিশল

মহেশ্বর চক্রবর্তী

বাঁচানো গেল না হুগলি জেলার স্বাধীনতা আন্দোলনের পীঠস্থানকে। গান্ধিজি, চিত্তরঞ্জন দাশ, নজরুল ইসলামের মতো একের পর এক মহীয়সীর পা পরেছে হুগলির বিদ্যামন্দির ভবনে। আজ সেই ভবনই ইতিহাস। প্রমোটারদের কবলে বিপ্লবীদের আস্তানা। দেশপ্রেমিকদের স্মৃতি চিহ্ন মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে অথচ স্বাধীন দেশের প্রশাসন চুপ। চোখ বুঝে রয়েছে। তাকে সংরক্ষণ করা বা সংস্কার করার কোনও উদ্যোগ নেই। হুগলির ইমামবাড়ার সন্নিকটে ছিল এই বিদ্যামন্দির ভবন। ১৯২০ দশকে সারা দেশে যখন ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে তখনই ভূপতি মজুমদার, অধ্যাপক জ্যোতিষ চন্দ্র ঘোষ, হামিদুল হক, সিরাজুল হকের মতো মহান বিপ্লবীদের প্রচেষ্টায় এই ভবন গড়ে ওঠে। এই ভবনে শিক্ষালাভ, শরীর চর্চার পাশাপাশি বিপ্লবীরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতেন। সেজন্যই বিদ্যামন্দির ভবনে ইংরেজ প্রশাসনের ঘুম ছোটানো তাবড় তাবড় দেশ নায়করা এই ভবনে এসে ঘাঁটি করেছিলেন। ১৯২৩ সালে ধূমকেতু পত্রিকায় প্রকাশিত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা প্রকাশিত হওয়ার অপরাধে ব্রিটিশ সরকার কবিকে দেশদ্রোহের অপরাধে ১বছরের কারাদন্ড দেন। বিদ্যামন্দির ভবন থেকে কয়েকশো মিটার দূরে বর্তমান হুগলি জেলেই বন্দি ছিলেন তিনি। এই জেলেই অনশন শুরু করেন বিদ্রোহী কবি। অবশেষে বিশ্বকবির অনুরোধ সূচক পত্র মারফত আবেদনে সাড়া দিয়ে নজরুল অনশন ভঙ্গ করেন। বর্তমানে নজরুলের সেই বন্দি থাকা কক্ষ আজও হুগলি জেলে সংরক্ষিত। এই জেল থেকে বেরিয়েই বিদ্রোহী কবি আশ্রয় নিয়েছিলেন বিদ্যামন্দির ভবনে। বিদ্যামন্দির ভবনের কাছেই একটি ঘরে সহধর্মিনী প্রমিলাদেবীকে নিয়ে উঠেছিলেন নজরুল। কবির প্রথম সন্তান কৃষ্ণ মহম্মদ এই ঘরেই জন্মগ্রহন করেন। সেই সূত্রে বিদ্যামন্দির ভবনে কবির পরিবারের পা পরেছিল। কিন্তু সেই ভবন আজ ধুলোয় মিশে গিয়েছে। টিন দিয়ে ঘেরা ওই জায়গা। একাংশের উঁচু পাঁচিলের উপর থেকে কোনওভাবে নজর দিলে দেখা যাবে পরে রয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। অর্থাৎ প্রমোটারের হাতে পৌঁছে গেছে এই জমিটিও। আগামী দিনে এখানেই গড়ে উঠবে ঝাঁ চকচকে ফ্ল্যাট। হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার পুরপ্রধানও একথা স্বীকার করলেন। বিদ্যামন্দির ভবনের সামনে তৈরি গান্ধিজির আবক্ষ্য মূর্তিটিও ফ্যাকাসে হয়ে পরবে অত্যাধুনিক আবাসনের পাশে। উচ্চ শিক্ষিত মানুষদের বাসস্থান হয়ে উঠবে এই ভবন। তাঁদের মাঝেই চাপা পরে থাকবে বিপ্লবীদের ইতিহাস সমৃদ্ধ হুগলির বিদ্যামন্দির ভবন। এখন দেখার প্রশাসন কি পদক্ষেপ নেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three + sixteen =