মুম্বই-বধ চেন্নাইয়ের

তিনি আর অধিনায়ক নন। পড়ন্ত সূর্য। অথচ তিনিই চেন্নাই সুপার কিংসের অকূলের কূল, অগতির গতি, অনাথের নাথ।
তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনি। দিনান্তে ধোনির জন্য জয়ধ্বনি চিপকে।

গোটা দেশ ধরেই নিয়েছিল আজ রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে আইপিএল। সে যতই আইপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শনিবার হোক না কেন!

হলুদ বনাম নীল। ধোনি বনাম রোহিত। সিএসকে বনাম মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। আইপিএলের ‘এল ক্লাসিকো’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল এই লড়াই। সেই লড়াইয়ে সিএসকে খুব সহজেই জিতল। রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের চেন্নাই ৫ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটে হারাল সূর্যকুমার যাদবের মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে।

৪৩-এর পুরুষসিংহ এখনও তড়িৎগতিতে স্টাম্প করতে পারেন। তিনিই ফিল্ডার সাজান, তিনি দল পরিচালনা করেন, তিনিই পরামর্শ দেন, তিনিই এই দলের হৃদপিণ্ড। কেরিয়ারের সায়াহ্নে পৌঁছে যাওয়া ধোনি এখনও চেন্নাইয়ের প্রাণভোমরা। তাঁর জন্যই হাজার মাইল পথ পায়ে হেটে মাঠে যাওয়া যায়।

লড়াই ছিল ধোনি-রোহিতের। হিটম্যান খাতাই খুলতে পারলেন না। শূন্যের রেকর্ডে সবার উপরে তাঁর নাম। ১৮টি শূন্য রয়েছে তিন ব্যাটারের। তাঁদের মধ্যে একজন রোহিত। বাকি দু’জন দীনেশ কার্তিক ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।

রোহিতকে দ্রুত ফেরান খলিল আহমেদ। মুম্বই স্কোরবোর্ডে কোনও রানই করতে পারেনি তখনও। আরেক বিপজ্জনক ওপেনার রায়ান রিকেটলটনও (১৩) খলিলের শিকার। কিন্তু ধোনির দল চিপকে খুঁজে পেল কোহিনূর।

২০ বছরের আফগান স্পিনার নূর আহমেদের ঘূর্ণিতে মুম্বই ইনিংস তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। ১৮ রানের বিনিময়ে চার-চারটি উইকেট নিলেন নূর। তাঁর বলেই বিদ্যুৎগতিতে সূর্যকুমার যাদবকে স্টাম্প করলেন ধোনি। নূরের বল খেলতে গিয়ে ক্রিজের বাইরে চলে গিয়েছিলেন মুম্বই অধিনায়ক। আর মুহূর্তে উইকেট ভেঙে দেন ধোনি। সূর্য টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বিপজ্জনক ব্যাটার। তিনি ২৯ রানে ফিরে যান। অন্যদিকে তিলক ভার্মাও বিস্ফোরক ব্যাটার। জাতীয় দলের জার্সিতে তিনি সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নতুন নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। সেই তিলক ভার্মাও ঠকে গেলেন নূরের ডেলিভারিতে। মারকুটে রবিন মিজের জন্য ঠিক জায়গায় ধোনি রেখে দিলেন রবীন্দ্র জাদেজাকে। শেষের দিকে দীপক চাহার ২৮ রানে অপরাজিত থাকায় মুম্বই ৯ উইকেটে ১৫৫ রান করে।

চিপকের পিচ মন্থর হয়ে যায়। ব্যাট করা কঠিন হয়ে পড়ে। রাচীন রবীন্দ্রর উপমহাদেশের পিচ সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপে খেলতে এসে চমকে দিয়েছিলেন রাচীন। তিনি এবং রাহুল ত্রিপাঠী চেন্নাইয়ের হয়ে মুম্বইয়ের রান তাড়া করতে নামেন। রাহুল ত্রিপাঠী বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি। মাত্র ২ রানে ফিরে যান তিনি। সিএসকে-র রান তখন ১১ রানে এক উইকেট। রাচীন ও রুতুরাজ গায়কোয়াড় ৬৭ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। রাচীন ও রুতুরাজের পার্টনারশিপে আগ্রাসী ব্যাটিং করেন চেন্নাই অধিনায়ক রুতুরাজ। ২৬ বলে ৫৩ রানে তিনি ফিরে যান। ৬টি চার ও ৩টি ছক্কা সাজানো ছিল রুতুরাজের ইনিংসে। রুতুরাজ ফিরে যাওয়ার পরে শিবম দুবে (৯) দ্রুত ফিরে যান। ভিগনেশকে গ্যালারিতে ফেলতে গিয়ে দীপক হুদা (৩) নিজের উইকেট ছুড়ে দেন। হঠাৎই মুম্বই অন্য গন্ধ পেতে শুরু করে। স্যাম কারেন (৪) আত্মঘাতী শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হন জ্যাকসের বলে। ম্যাচের উপরে হঠাৎই চেপে বসে সূর্যর মুম্বই। পরপর উইকেট হারানোর ফলে রানের গতি কমে যায় চেন্নাইয়ের। স্পিনের মায়াজালে চেন্নাইকে বিদ্ধ করার চেষ্টা করে মুম্বই।

গলায় চেপে বসা ফাঁসটা আলগা করেন দুই রবি– রাচীন রবীন্দ্র ও রবীন্দ্র জাদেজা। একসময়ে বল ও রানের মধ্যে ব্যবধান ছিল সাত। জাদেজা বহু যুদ্ধের ঘোড়া। তিনি বোল্টের ওভারে রান ও বলের মধ্যে ব্যবধান কমান। বাকি কাজটা সারেন রাচীন রবীন্দ্র। কিন্তু শেষ মুহূর্তে রান আউট হন জাদেজা (১৭)। তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে মাঠে নামেন ধোনি। তাঁকে অবশ্য কিছু করতে হয়নি। ছক্কা মেরে দলকে জেতালে হেডলাইন হয়ে যেতেন হয় ধোনি। কিন্তু তাঁর পরিবর্তে রাচীন রবীন্দ্র ছক্কা মেরে ম্যাচ জেতান চেন্নাইকে। তিনি ৬৫ রানে অপরাজিত থেকে যান। প্রথম ম্যাচ জিতে শুরুটা ভাল করল চেন্নাই। মুম্বইয়ের সূর্য ডুবল চিপকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × five =