শুরুটা হতাশার। শেষটা হাসির। ব্যক্তিগত ইভেন্টে মনু ভাকের পদকের খাতা খুলেছিলেন প্যারিসে। ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে মিক্সড টিম ইভেন্টে সরবজ্যোৎ সিংকে নিয়ে আরও একটা পদক উপহার দিলেন মনু ভাকের। ভারত অনেকটা এগিয়ে গেলেও দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করে কোরিয়া। ম্যাচ পয়েন্ট থেকে ভারতের অপেক্ষা বাড়ে। কিন্তু স্নায়ুর চাপ সামলে রাখেন ভারতীয় শুটাররা। প্যারিসে ভারতের দ্বিতীয় পদক। সেটিও শুটিংয়ের সৌজন্যেই। মনু ভাকের যেন ইতিহাসের ইতিহাস গড়লেন। ভারতের প্রথম মহিলা শুটার হিসেবে অলিম্পিক পদক প্রাপ্তির ইতিহাস গড়েছিলেন, এ বার দ্বিতীয় পদক তাঁর ঝুলিতে। স্বাধীন ভারতের প্রথম অ্যাথলিট হিসেবে অলিম্পিকের এক সংস্করণে জোড়া পদকেরও রেকর্ড মনুর। ১২৪ বছর আগে, ১৯০০ সালের প্যারিস অলিম্পিকেই ২০০ মিটার হার্ডলস ও ২০০ মিটার দৌড়ে দুটো রুপো পেয়েছিলেন নর্ম্যান প্রিচার্ড। যতই দেশ নিয়ে বিতর্ক থাক, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি তাঁকে ব্রিটিশ নয়, ভারতের নাগরিক হিসেবেই স্বীকৃতি দিয়েছে। সেই নিরিখে মনু সেই প্যারিসেই ছুঁলেন ১২৪ বছরের পুরনো ইতিহাস।
প্রথম সিরিজে খারাপ শুরু। সরবজ্যোৎ ৮.৬, মনু ১০.২। ভারত ১৮.৮। কোরিয়া প্রথম সিরিজটা জিতেও নেয়। পরের সিরিজেও কোরিয়ার দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর দুর্দান্ত নিশানা। তবে ঘুরে দাঁড়ায় ভারত। ৬-২ এগিয়ে যায় ভারত। মনুর মনোসংযোগ দুর্দান্ত। ৮-২ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ভারত। প্রথম সিরিজের ভুল থেকে ঘুরে দাঁড়ান সরবজ্যোৎও। ব্রেকে ৮-২ এগিয়ে ভারত। বিরতির পর কোরিয়ান প্রতিপক্ষ ১০.৮ মারেন, সরবজ্যোৎ ১০.২। ফলে স্কোর লাইন ৮-৪ হয়ে যায়। এ বার মনুর পালা। মনুর সৌজন্যে ফের লিড নেয় ভারত। সাত রাউন্ডের পর ১০-৪ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। তবে ও ইয়ে শিন ভারতের সরবজ্যোতের বিরুদ্ধে আরও একটা সিরিজ জিতে ১০-৮ করে কোরিয়া।
আরও একটা ব্রেক। ৯ নম্বর সিরিজে ও ইয়ে শিন এবং মনু ভাকের। ১০.৫ এবং ১০ মেরে ফের ভারতকে ১২-৬ লিড দেন মনু। আর দুটো রাউন্ড বাকি। ১০ নম্বর সিরিজে লি এবং মনুর লড়াই। কোরিয়ান প্রতিপক্ষ দুই শটে ১৯.৪ মারেন, মনু ২০.৮। আরও একটি সিরিজ জিতে ভারত ১৪-৬ এগিয়ে যায়। আর একটা সিরিজ জিতলেই ভারতের ব্রোঞ্জ। ম্যাচ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে ভারত। ও ইয়ে শিন বনাম সরবজ্যোৎ। দুই শটের সিরিজে ও ইয়ে শিন ১৯.৮ মারেন। সরবজ্যোৎ ১৯.৩। ফলে স্কোর দাঁড়ায় ভারতের ১৪-৮। ভারতের পদকের অপেক্ষা বাড়ান ও ইয়ে শিন। পরের সিরিজে ও ইয়ে শিন ১০.২ ও মনু ১০.৬ মারেন। তারপরও ১৪-১০ হয়ে দাঁড়ায় স্কোর লাইন। পরপর দুটি সিরিজ জিতে ভারতের চাপ বাড়ায় কোরিয়া। শেষ হাসি ভারতের। পরবর্তী সিরিজে সরবজ্যোৎ পদক নিশ্চিত করেন।
২০১২ সালেকর লন্ডন অলিম্পিকের শুটিং থেকে এসেছিল জোড়া পদক। বিজয় কুমার ও গগন নারাংয়ের হাত ধরে। পরের দুটো অলিম্পিকে শুধুই শূন্যতা। সেখান থেকে মনু-ইতিহাস ফের ভারতকে ফিরিয়ে দিল পুরনো গৌরব।