ঢোলাহাটের ঘটনায় দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার বিচারপতি অমৃতা সিনহা নির্দেশ দেন, শনিবার মামলাকারীর উপস্থিতিতে হবে ময়নাতদন্ত। ময়নাতদন্তের সময় একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে উপস্থিত থাকতে হবে। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের সময়ও ভিডিওগ্রাফি করতে হবে। ভিসেরা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য হায়দরাবাদে পাঠাতে হবে বলেও নির্দেশ দেন বিচারপতি। আগামী ২২ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি। প্রথমবার ময়নাতদন্তে যে রিপোর্ট উঠে এসেছে, তা দেখে একাধিক প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। গ্রেফতার করার সময় যিনি সুস্থ ছিলেন, সেই যুবক জামিন পাওয়ার চার দিন পর মারা গেলেন কীভাবে, এই প্রশ্ন উঠেছে আদালতে। তাই শুক্রবার বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে ‘প্রমাণ এখনই সংগ্রহ করতে হবে, নাহলে আর ভবিষ্যতে সংগ্রহ করা যাবে না। মৃতের বাবার উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত হবে বলে নির্দেশ দেন বিচারপতি।’ এরই পাশাপাশি ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সম্পর্কে বিচারপতি উল্লেখ করেন, গ্রেফতারির চারদিন পর দেখা যায় সারা দেহে দাগ, কপালে রক্তের দাগ। রাজ্যকে বিচারপতি অমৃতা সিনহা বলেন, ‘অনেক নতুন প্রশ্ন উঠে আসছে। জেলের মধ্যে মৃত্যু না হলেও সারা দেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।’
শুক্রবার একইসঙ্গে বিচারপতি অমৃতা সিনহা মন্তব্য করেন, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিচারের স্বার্থে এখুনই সমস্ত তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। সুন্দরবনের পুলিশ সুপার সমস্ত সাক্ষীদের এবং পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবেন, যেন তাঁদের হুমকি দেওয়া না হয়। ওই থানার আইসি মানস চট্টোপাধ্যায়কে এই তদন্তের অংশ করা যাবে না। একজন চিকিৎসকের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত হয়েছে। ময়নাতদন্তের সময় পরিবারের কেউ ছিলেন সেই মর্মে প্রমাণ নেই। ম্যাজিস্ট্রেটও উপস্থিত ছিলেন না। এর প্রেক্ষিতে রাজ্য আদালতকে জানায়, ঢোলাহাটের ঘটনায় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। কোনও ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত হয়নি, কিন্তু ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছে। এরপরই বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ম্যাজিস্ট্রেট কেন ছিলেন না তা নিয়ে। সঙ্গে এ প্রশ্নও তোলেন, কেন পরিবারের লোককে জানানো হয়নি সে ব্য়াপারেও। এদিকে গাইডলাইন মেনে ময়নাতদন্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। প্রত্যুত্তরে রাজ্যে জানায়, মৃতের জামাইবাবু মহসিন মোল্লা ময়নাতদন্তের সময় উপস্থিত ছিলেন। এর প্রেক্ষিতে আবেদনকারীর আইনজীবী বলে, ‘না, আমাদের পরে জানিয়েছে।’ রাজ্যে জানায়, ‘দেহ মৃতের বাবাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
এরপরই বিচারপতি বলেন, যদি নিয়ম মেনে ময়নাতদন্ত না হয়, তাহলে যথাযথ তদন্তের পথে রাজ্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। ঢোলাহাটের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালের ভূমিকাও। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জন্ডিসের কথা বলা নেই। ৪ জুলাই যখন প্রথমবারের জন্য নিহত যুবককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তিনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাজ্যের দাবি ছিল, এই বেসরকারি হাসপাতাল জানিয়েছে, যে মৃত যুবক জন্ডিসে আক্রান্ত ছিলেন। বিচারপতির প্রশ্ন, হাসপাতালকে মামলায় পার্টি করা হয়েছে কি না তা নিয়েও।
প্রসঙ্গত, গত চার জুলাই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে জামিন পেয়ে যান তিনি। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে একাধিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে কলকাতায় হাসপাতালে থাকাকালীন মৃত্যু হয় ওই যুবকের। অভিযোগ, গ্রেফতার করার পর ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছিল ওই যুবককে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ঢোলাহাট থানায় বিক্ষোভও দেখান প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা। সঙ্গে বিচারপতি মৃতের পরিবারকে হুমকি দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্ত করতে হবে বলেও নির্দেশ দেন।