টি-২০ ক্রিকেটে ফের বিশ্বসেরা ভারত

৩০ বলে প্রয়োজন ছিল ৩০ রান। হাইনরিখ ক্লাসেন এক ওভারেই ম্যাচটাকে নিয়ে আসেন প্রায় দক্ষিণ আফ্রিকার হাতের মুঠোয়। ভারতের করা টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের দলীয় সর্বোচ্চ ৭ উইকেটে ১৭৬ রানও তখন সহজ লক্ষ্য মনে হচ্ছিল। কিন্তু যশপ্রীত বুমরা তাদের সেই সহজ কাজটাকেই কঠিন করে তোলেন অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে। ডেথ ওভারে ২ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়ে শেষ ওভারে সমীকরণটা কমিয়ে আনেন ১৬ রানে।

হার্দিক পান্ডিয়ার করা ওই ওভারের প্রথম বলটা ছিল ফুলটস। স্ট্রাইকে থাকা ডেভিড মিলার ঠিকঠাক মেরেছিলেনও। কিন্তু লং অফ বাউন্ডারিতে থাকা সূর্যকুমার যাদবের অবিশ্বাস্য রিলে ক্যাচে নিশ্চিত ছক্কাটাই হয়ে যায় আউট। জয় তখন উল্টো ভারতের হাতের মুঠোয়, টি–টোয়েন্টি শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটটা আবার মাথায় উঠল বলে। শেষ ওভারে হার্দিক পান্ডিয়া সেই সুযোগ হাতছাড়া হতে দেননি। ওভারের পঞ্চম বলে কাগিসো রাবাদাকে আউট করলেন। শেষ ওভারে মাত্র ৮ রান দিলে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস শেষ হয় ৮ উইকেটে ১৬৯ রানে। ৭ রানের জয়ে ১৭ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল ভারত। প্রথম শিরোপা ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে।

ব্যাটিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের শুরুটা ভালো হয়নি। পাওয়ারপ্লেতেই ওপেনার রিজা হেনড্রিকস ও তিনে নামা এইডেন মার্করাম আউট হন। কুইন্টন ডি কক টিকে থাকায় তবু প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে ওঠে। ফর্মে থাকা এই বাঁহাতি ওপেনারের সৌজন্যে পাওয়ারপ্লেতে ৪২ রান তুলে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। ডি ককের কাজটা সহজ করেছেন তরুণ ট্রিস্টান স্টাবস। ক্রিজে এসেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন তিনি। দুজনের ৩৮ বলে ৫৮ রানের জুটিতে ম্যাচে ফিরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। নবম ওভারে এসে জুটিটা ভাঙেন প্যাটেল। ২১ বলে ৩১ রান করা স্টাবসকে বোল্ড করেন তিনি। ডি ককের ইনিংসও বড় হয়নি। অর্শদীপের করা ১৩তম ওভারে ৩১ বলে ৩৯ রান করে আউট হন এই বাঁহাতি।

হাইনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার অবশ্য তাঁদের অনুপস্থিতি টের পেতে দেননি। ক্রিজে এসেই দুই শ স্ট্রাইক রেটে খেলা শুরু করেন ক্লাসেন। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে বল আর রানের পার্থক্যটা কমিয়ে আনেন এক ওভারেই। প্যাটেলের করা ইনিংসের ১৫ম ওভারের আগে আগে ৩৬ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের জন্য দরকার ছিল ৫৪ রান। প্যাটেলের ওভারে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৪ রান নিলে সমীকরণ নেমে আসে ৩০ বলে ৩০ রানে। পরের ওভারে ২৩ বলে অর্ধশত পূর্ণ করেন ক্লাসেন। পান্ডিয়ার করা ১৭তম ওভারে ক্লাসেন কট বিহাইন্ড হলেও ম্যাচ তখনো প্রোটিয়াদের হাতের মুঠোয়। ২৭ বলে ২টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৫২ রানে থামে ক্লাসেনের ইনিংস।

ম্যাচের মোড় ঘুরতে থাকে সেখান থেকেই। ক্লাসেনের বিদায়ের পর প্রোটিয়াদের চেপে ধরেন বুমরা। শেষ স্পেলে ২ ওভার বল করে তিনি রান দিয়েছেন মাত্র ৬, উইকেট নিয়েছেন একটি। তবু মিলার টিকে থাকায় স্বপ্ন দেখছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু শেষ ওভারে জয়ের জন্য যখন ১৬ রান দরকার, তখন হার্দিক পান্ডিয়ার বলে আউট হলে থামে মিলারের ১৭ বলে ২১ রানের ইনিংস।

এর আগে ভারত ইনিংসের শুরুতেই রোহিত ও ঋষভ পন্তের উইকেট হারায়। বাঁহাতি স্পিনার মহারাজের সাহসী ও কৌশলী বোলিংয়ে ৫ বলে ২টি চারে ৯ রান করার পরই দারুণ ফর্মে থাকা আউট হন রোহিত। দ্বিতীয় উইকেটের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি মহারাজকে। ওই ওভারেরই শেষ বলে তাঁর ফ্লাইটের জালে আটকান পন্ত (০)। ভারতের রান তখন ২ ওভারে ২৩/২।

জোড়া উইকেটের পতনে ভারতের রানের গতি কমে আসে। কোহলি ধরে খেলা শুরু করেন। সঙ্গে মাত্রই ক্রিজে আসা সূর্যকুমার যাদব। পরের দুই ওভারে রান আসে মাত্র ৯। পঞ্চম ওভারে এসে রান বাড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে আউট হন সূর্যকুমার। কাগিসো রাবাদার বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ আউট দেন তিনি (৩)। ৩ উইকেট হারানোর পর পাওয়ারপ্লেতে বেশি দূর এগোতে পারেনি ভারত। ৬ ওভারে ৩ উইকেটে ৪৫ রান করে ভারত।

মাঝের ওভারে অবশ্য ভারতীয়রা শুরুর ধাক্কা ভালোভাবেই সামলে নেয়। কোহলির সঙ্গে বাঁহাতি-ডানহাতি সমন্বয়ের জন্য অক্ষর প্যাটেলকে ক্রিজে পাঠানো হয়েছিল। চার-ছক্কা মেরে কোহলির ওপর চাপ কমানোর চেষ্টা করেন তিনি, রান রেট নিয়ে যান ৭-এর ওপারে। ইনিংসের ১৪তম ওভারে রানআউট হয়ে যান প্যাটেল। তবে ৩১ বলে ১টি চার ও ৪টি ছক্কায় সাজানো ৪৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটি ভারতীয় ইনিংসের ছবিটাই দেয় পাল্টে।

কোহলি টিকে ছিলেন ১৮.৫ ওভার পর্যন্ত। ৪৮ বলে অর্ধশত করলেও তিনি ইনিংস শেষ করেছেন ৫৯ বলে ভারতীয় ইনিংসের সর্বোচ্চ ৭৬ রান করে। ৬টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল তাঁর ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়ার ইনিংসে। শিবম দুবের ব্যাট থেকে এসেছে ১৬ বলে ২৭ রান। তাতেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডে পৌঁছে যায় ভারত।

অন্যদিকে সম্ভাবনা জাগিয়েও দক্ষিণ আফ্রিকা আবারও দেখাল চাপের মুখে এখনো আগের মতোই ভেঙে পড়ে তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − seven =