অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে গ্রুপসেরা জার্মানি, শেষ ষোলোয় সঙ্গী সুইজারল্যান্ড

টানা দুই ম্যাচ জিতে আগেই সুপার এইট নিশ্চিত করেছিল জার্মানি। এরপরও সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষ আজকের ম্যাচটি মোটেই গুরুত্বহীন ছিল না। বিশেষ করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের রাউন্ডে যেতে এই ম্যাচটি ছিল মহাগুরুত্বপূর্ণ। এমন ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ের গোলে হার এড়িয়ে গ্রুপ সেরা হয়েই পরের পর্বে গেল জার্মানি। ৯২ মিনিটে বদলি খেলোয়াড় নিকলাস ফুলক্রুগের গোলে ১–১ গোলে ড্র করেছে জার্মানরা।

আগের দুই ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা জার্মানিকে আজ বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল সুইসরা। জমাট রক্ষণে জার্মান আক্রমণভাগকে বেশ চাপেই রেখেছিল তারা। একপর্যায়ে জার্মানদের হার নিশ্চিতই মনে হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বরুসিয়া ডর্টমুন্ড তারকা ফুলক্রুগই ত্রাতা হয়ে বাঁচিয়েছেন জার্মানিকে। এ জয়ে গ্রুপ ‘এ’  থেকে ৭ পয়েন্ট নিয়ে পরের পর্বে গেল জার্মানি। ৫ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়েছে সুইজারল্যান্ড। একই দিনের অন্য ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে ১–০ গোলে হারিয়েছে হাঙ্গেরি। তাতে অবশ্য কোনো লাভ হয়নি দুই দলই বিদায় নিয়েছে গ্রুপপর্ব থেকে।

ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই কর্নার থেকে গোলের সুযোগ পায় জার্মানি। তবে সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেনি তারা। শুরু থেকে জার্মানি বলের দখল রেখে খেললেও, সুইজারল্যান্ড ছিল বেশ সতর্ক। জার্মানিকে আটকে রেখে আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টাও করে তারা। এর মধ্যেও ১২ মিনিটে সুইস রক্ষণকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু অল্পের জন্য গোলের দেখা পাননি কাই হাভার্টজ।

মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ রেখে একের পর এক আক্রমণে যাওয়ার সুফল জার্মানি পায় ম্যাচের ১৭ মিনিটে। বক্সের বেশ বাইরে থেকে দারুণ এক শটে গোল করেন রবার্ট আনড্রিচ। তবে একই আক্রমণের শুরুতে বক্সের ভেতর জামাল মুসিয়ালা প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে ফাউল করায় ভিএআর যাচাইয়ের পর বাতিল করা হয় গোলটি।

গোলটি না পেলেও সুইস রক্ষণকে বেশ চাপে রাখে জার্মানরা। যে কারণে জার্মানি আক্রমণে যাওয়ার সময় সুইজারল্যান্ডের প্রায় সব খেলোয়াড়কে নিচে নেমে এসে রক্ষণ সামলাতে হচ্ছিল। শেষ ষোলোয় যাওয়ার জন্য সুইজারল্যান্ডের একটি জয়ই যথেষ্ট ছিল। যে কারণে বেশ সতর্ক হয়ে খেলছিল তারা। কিন্তু এর মধ্যে ২৯ মিনিটে দাপুটে খেলতে থাকা জার্মানিকে স্তব্ধ করে এগিয়ে যায় সুইজারল্যান্ড। দারুণ এক প্রতি–আক্রমণ থেকে রেমো ফ্রুয়েলারের সহায়তায় অসাধারণ এক স্লাইডিং শটে গোল করে সুইসদের এগিয়ে দেন ডান এনডয়ে।

একটু পর এনডয়ের শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে না গেলে দুই গোলে পিছিয়ে যেতে পারত জার্মানরা। এগিয়ে গিয়ে সুইজারল্যান্ড আরও বেশি সতর্ক ফুটবল খেলতে শুরু করে। এ সময় রক্ষণে জোর দিলেও আক্রমণের সুযোগগুলোও কাজে লাগানোয় চেষ্টা করেছে তারা। জার্মানি অবশ্য দলীয় প্রচেষ্টার পাশাপাশি ব্যক্তিগত নৈপুণ্য দিয়েও ম্যাচে সমতা ফেরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল।

৪১ মিনিটে সুযোগ হাতছাড়া করেন আন্তোনিও রুডিগার। প্রথমার্ধের শেষ দিকে গোলের জন্য আরও মরিয়া হয়ে আক্রমণে যায় জার্মানি। সুইস রক্ষণে এ সময় বেশ প্রেসও করেছে তারা। কিন্তু পিছিয়ে থেকেই শেষ পর্যন্ত বিরতিতে যেতে হয় ইউলিয়ান নাগলসম্যানের দল।

বিরতির পর জার্মানি চেষ্টা করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে। বিপরীতে সুইজারল্যান্ডও আক্রমণে গিয়ে তৈরি করছিল হুমকি। ৫০ মিনিটে ফ্লোরিয়ার উইর্টজের দারুণ এক পাস থেকে নেওয়া জামাল মুসিয়ালার শট ঠেকিয়ে দেন সুইস গোলরক্ষক। ফিরতি বলে ব্যর্থ হন ইলকাই গুন্দোয়ানও। গোলের লক্ষ্যে ধীরে ধীরে ম্যাচে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে জার্মানি।

৫৫ মিনিটে দারুণ এক আক্রমণ থেকে ক্রুসের শট চলে যায় পোস্টের বাইরে। এ সময় একের পর আক্রমণে সুইস রক্ষণের পরীক্ষা নিতে থাকে জার্মানি। তবে সুইসদের জমাট রক্ষণ ভেঙে কাঙ্ক্ষিত গোলটি পাওয়া হচ্ছিল না স্বাগতিকদের। জার্মানিকে বলতে গেলে কোনো সুযোগই দিচ্ছিল না সুইস ডিফেন্ডাররা। স্বাগতিকদের আক্রমণগুলো যেন পথই খুঁজ পাচ্ছিল না। ৭০ মিনিটে জশুয়া কিমিখের শট অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ব্লক করে সুইজারল্যান্ডকে বাঁচিয়ে দেন ম্যানুয়াল আকাঙ্জি। ৮২ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে ক্রুসের শট অল্পের জন্য জালে জড়য়নি। ৮৪ মিনিটে জার্মান শিবিরকে স্তব্ধ করে ব্যবধান ২–০ করে সুইজারল্যান্ড। তবে অফসাইডের ফাঁদে বাতিল হয় সেই গোল। এরপর ম্যাচ যখন শেষ বাঁশি বাজার অপেক্ষায় তখনই দারুণ এক গোলে জার্মানির হয়ে ম্যাচে সমতা ফেরান ফুলক্রুগ। এই গোলই জার্মানিকে গ্রুপসেরা হিসেবে পরের পর্বে নিয়ে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − thirteen =