এমন দিনের অপেক্ষা করে না কেউ। উপেক্ষাও করা যায় না। প্রতিটা ক্রীড়াবিদের যেমন শুরু রয়েছে, কোনও একদিন শেষও। সুনীল ছেত্রীর কেরিয়ারে সেই দিনটা এল। আগেই ঘোষণা করেছিলেন, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে কুয়েতের বিরুদ্ধে ম্যাচটাই আন্তর্জাতিক ফুটবলে তাঁর বিদায়। কলকাতা ময়দান থেকেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে উত্থান সুনীল ছেত্রীর। সেই কলকাতাতেই আন্তর্জাতিক ফুটবলে ইতি। ক্যাপ্টেনের এই ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়েছিলেন প্রত্যেকেই। ক্লাব ফুটবলের সতীর্থ থেকে প্রতিপক্ষ। জাতীয় দলের প্রাক্তন সতীর্থ। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে উপস্থিত এমন অনেকেই। উপলক্ষ্য, ক্যাপ্টেন সুনীল ছেত্রীর বিদায়ী ম্যাচ। লক্ষ্য, কুয়েতকে হারিয়ে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ যোগ্যতা অর্জন পর্বের পরবর্তী রাউন্ড। পাশাপাশি ২০২৭ সালের এএফসি এশিয়ান কাপেরও যোগ্যতা অর্জন।
গ্যালারিতে ডার্বির মতো ভিড় নয়। তবে প্রচুর সমর্থন। সবই সুনীলের জন্য। ক্লাব ফুটবলে কেউ বা মোহনবাগান সমর্থক, কেউ ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান। সুনীলের ম্যাচে সকলেই একযোগে ব্লু টাইগার্সের সমর্থনে। নানা রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি। জয়ের তাগিদ। মরিয়া চেষ্টা। কিন্তু বারবার যেন মন খারাপের মুহূর্ত। শেষ বাঁশি মানেই তো প্রাক্তন হয়ে যাবেন সুনীল ছেত্রী! সময় যেন না ফুরোয়, সেটাই যেন চাইছিলেন ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা।
ম্যাচের আগে সুনীল ছেত্রী পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন, এই তাঁর জন্য নয়, ভারতের ম্যাচ এটি। আবেগ দূরে সরিয়ে জয়ের লক্ষ্যেই নামবেন। সুনীল ছেত্রীর মতো পরিশ্রমী ফুটবলার ভারতীয় দলে আগে দেখা গিয়েছে কি? হয়তো না। ভবিষ্যতে কেউ সুনীলের মতো হতে পারবেন কিনা, তারও গ্যারান্টি নেই। শেষ ম্যাচেও সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করলেন সুনীলই। সতীর্থরাও চেষ্টা করে গেলেন। সাফল্য মিলল না যদিও। কুয়েতের বিরুদ্ধে ড্র দিয়েই নীল জার্সিতে কেরিয়ারের ইতি সুনীলের।
ম্যাচের প্রথম ১০ মিনিট যদিও ভারতীয় ফুটবল প্রেমীদের জন্য অস্বস্তির পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। কুয়েত দারুণ একটা সুযোগ তৈরি করলেও লক্ষ্যে বল রাখতে পারেনি। গুরপ্রীতের চোটও অস্বস্তিতে রেখেছিল। ১০ মিনিট পেরোতেই যুবভারতীর দখল ব্লু টাইগার্সদের। লিস্টন কোলাসো বল বাড়িয়েছিলেন, সুনীল ছেত্রী অবধি পৌঁছয়নি। তার আগেই প্রতিপক্ষ ডিফেন্স ক্লিয়ার করে। কর্নার থেকে সুযোগ। অনিরুদ্ধ থাপা দুর্দান্ত জায়গায় বল রেখেছিলেন, আনোয়ার আলি হেড করলেও তা ক্রসবারের উপর দিয়ে। তবে আগের মুহূর্তটার জন্য আপশোস হতেই পারে ভারতীয় শিবিরে।
সুযোগ তৈরি হল অনেক। গোল হল না। ম্যাচের ৭০ মিনিটে মনবীর সিং নামতেই যেন ভরসা বাড়ল। সুনীলের শেষ ম্যাচে অভিষেক হল এডমান্ডের। পাঁচ বছরে এই প্রথম আই লিগের কোনও প্লেয়ার আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক করলেন! কিন্তু একটা আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হল ক্যাপ্টেনকে। শেষ ম্যাচে জয় এল না। তরুণ সতীর্থদের কান্না যেন বলে দিচ্ছিল, মন থেকে কতটা চেয়েছিলেন। ১৫১ ম্যাচ, ৯৪ গোল। একঝাঁক ট্রফি। ক্যাপ্টেন, লিডার, লেজেন্ড। ভারতীয় ফুটবলে একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি।