ব্যারাকপুর : দলীয় প্রার্থী অর্জুন সিংয়ের সমর্থনে জগদ্দলের পেপার মিল ময়দানে প্রচারে এসে সন্দেশখালি ছাড়াও নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেইসঙ্গে জগদ্দলের জনসভা থেকে পাঁচটি গ্যারান্টির কথা শোনালেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর প্রথম গ্যারান্টি, ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ নয়। দ্বিতীয় গ্যারান্টি হল, তফসিলি জনজাতির সংরক্ষণ কেউ শেষ করতে পারবে না। তৃতীয় গ্যারান্টি, মোদি যতদিন থাকবে, ততদিন দেশে রামনবমী পালন ও রামের পুজোয় কেউ বাধা দিতে পারবে না। চতুর্থ গ্যারান্টি, রামমন্দির নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিধান্ত কেউ বদলাতে পারবে না। আর পঞ্চম গ্যারান্টি হল, সিএএ কার্যকর করা কেউ আটকাতে পারবে না। তবে এদিন ভাষণের মাঝে তিনি বাংলায় বলে উঠলেন, ‘ মোদির গ্যারান্টি হল, গ্যারান্টি পূরণের গ্যারান্টি’। এদিন নিয়োগ দুর্নীতি নিয়েও কড়া মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর কথায়, শিক্ষক নিয়োগে রাজ্য সরকার রেট কার্ড বানিয়েছে। সেই রেট কার্ড খোলা বাজারে বিক্রি পর্যন্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ওএমআর সিট পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভুয়ো ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে। চাকরি বিক্রি করা হয়েছে। এমনকি আদালত বলেছে, এই দুর্নীতির পিছনে সরকারি মেশিনারি আছে। তৃণমূল এই রাজ্যের এমন হাল বানিয়ে দিয়েছে। জগদ্দলের মাটিতে দাঁড়িয়ে এদিন প্রধানমন্ত্রী জোরের বললেন, মোদি বাংলায় হওয়া সব লুটের হিসাব নেবে। বাংলায় নোটের পাহাড় বেরিয়েছে। সেই পাহাড়ের মালিকদের ছাড় দেব না। মোদির হুঙ্কার, দুর্নীতিতে জড়িতরা কেউ বাঁচবে না। নির্বাচনী প্রচারে এসে এদিন মোদি সন্দেশখালি নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, সন্দেশখালিতে কি হয়েছে, তা গোটা দেশ দেখেছে। সন্দেশখালির অভিযুক্তকে প্রথমে পুলিশ বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। এখন তৃণমূল নতুন খেলা শুরু করেছে। তৃণমূলের গুন্ডারা সন্দেশখালির মা-বোনদের ভয় দেখাচ্ছে ও ধমক দিচ্ছে। এই সন্দেশখালির মূল অত্যাচারীর নাম শেখ শাহজাহান। ওর ঘর থেকে বোমা-বন্দুক পাওয়া গেছে। কিন্তু ভোট ব্যাঙ্ক বাঁচাতে তৃণমূল ওকে ক্লিনচিট দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। প্রসঙ্গত, জুটমিল অধ্যুষিত এই ব্যারাকপুর। এই শিল্পাঞ্চল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যারাকপুর জুট ইন্ডাস্ট্রির হাব ছিল। গঙ্গা মায়ের আশীর্বাদে এখানে কৃষি জমির পাশাপাশি কটন, পেপার ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি একটা সময় ফুলেফেঁপে উঠেছিল। আজ জুট ইন্ডাস্ট্রির বেহাল দশা। মজদুরদের অবস্থা ভালো নয়। কিন্তু মোদি সরকার প্যাকেজিংয়ে একশো শতাংশ জুটের ব্যাগ ব্যবহারকে অনুমতি দিয়েছে। যাতে জুটমিল শ্রমিকদের পাশাপাশি কৃষকরা সফলতা পান। কিন্তু জুটের মাটিতে তৃণমূল শুধু ঝুট বলছে। ইন্ডিয়া জোট নিয়েও এদিন মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কংগ্রেস ও তৃণমূলের ইন্ডিয়া জোট তোষণ নীতি আর ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি ছাড়া কিছুই চেনে না। ইন্ডিয়া জোটের নেতারা মোদির বিরুদ্ধে ভোট জেহাদের ঘোষণা দিচ্ছে। এখানে তৃণমূলের বিধায়ক বলছেন, হিন্দুদের ভাগীরথীর নদীতে ভাসিয়ে দেবে। ওদের এত শক্তি, এত সাহস ? কার জোরে ওরা এই কথা বলছে? এদিন তিনি বলেন, ব্যারাকপুরের মাটি ইতিহাস রচনা করার মাটি। স্বাধীনতার সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এই মাটি। কিন্তু তৃণমূল এখানকার কি অবস্থা করেছে দেখুন। ব্যারাকপুরের সভা মঞ্চ থেকে এদিন একাধিকবার ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তোলেন। তিনি বলেন, হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বরদাস্ত করা হবে না। বাংলায় হিন্দুদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে রাখতে চায় তৃণমূল। হিন্দুদের তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। ওঁদের এত বড় সাহস। জয় শ্রীরাম স্লোগানের পাশাপাশি জগদ্দলের সভা থেকে ‘চোর ধরো, জেল ভরো’ আওয়াজও তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর দাবি, এই আওয়াজ বিরোধী দল তোলে নি। এই আওয়াজ তুলেছে বাংলার জনতা। তাঁর দাবি, ২০১৯ সালের চেয়েও ২০২৪ সালে বিজেপির বড় সফলতা আসবে। তাঁর আশা, ২০১৯ সালের চেয়েও ভালো ফল হবে ব্যারাকপুরে। এদিনের মঞ্চ থেকে দলীয় প্রার্থী অর্জুন সিং-কে বিপুল ভোটে জয়ী করার আহ্বান করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।