তীব্র দাবদাহে কারখানার দূষণের অভিযোগে বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদন, লাউদোহা: একে চাঁদিফাটা গরম, তার ওপর গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো দূষণ। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি কারখানার দূষণের জেরে, নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন লাউদোহা পঞ্চায়েতের ঝাজরা গ্রামের বাসিন্দারা। বয়স্ক থেকে শিশু সকলেই দূষণে আক্রান্ত। গ্রামের অধিকাংশ বয়স্ক শিশু থেকে মহিলা অ্যালার্জি, ফুসফুসজনিত রোগ ও চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর তারই প্রতিবাদে সুস্থ জীবন, বিশুদ্ধ বাতাস পেতে কারখানার গেটের সামনে শুক্রবার সকাল থেকে গ্রামের মহিলারা এসে হাজির হন। প্রধান গেটের সামনে বসে পড়ে দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বিগত বছর ঠিক এই দূষণের হাত থেকে বাঁচতে দীর্ঘ ৪৫ দিন ধরে কারখানার গেটের বাইরে আন্দোলন করেছিলেন গ্রামবাসীরা। ২২ এপ্রিল ২০২৩ সালে স্থানীয় প্রশাসন ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশ অনুসারে কারখানা কর্তৃপক্ষ সর্বসমক্ষে লিখিত আকারে গ্রামবাসীদের আগামী তিন চার দিনের মধ্যেই দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি কারখানার সিএসআর প্রকল্পে গ্রামের উন্নয়নের কাজ করা হবে বলেও জানায়। কিন্তু আশ্বাসই সার দীর্ঘ একবছর পরও দূষণ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র কাজ তো করেনি অফুরন্ত বেড়েছে দূষণের মাত্রা বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। দূষণে জেরবার গ্রামের ডাঙ্গাল পাড়া, দুর্গামন্দির পাড়া, জামাই পাড়া এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।
গ্রামের বাসিন্দা দূষণে আক্রান্ত নীলা চক্রবর্তী, বেবী চক্রবর্তীদের দাবি, গত বছর আন্দোলনের পর কারখানা কর্তৃপক্ষ রাত্রিবেলা কারখানার কালি ছাড়ার ব্যবস্থা করেছিল কিন্তু বর্তমানে দিনরাত অনবরত কারখানা থেকে বেরচ্ছে কালো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে কালি এলাকায় ফলে, গ্রামের পুকুরের জলের রং হয়েছে কালো, সবুজ গাছপালার পাতার রূপ বদলে কালো রঙ হয়ে গিয়েছে বর্তমানে। গ্রামে নেই বিশুদ্ধ বাতাস, গ্রামবাসী তাপস চক্রবর্তীর দাবি, বাড়ির উঠোনে চলাফেরা করলে মনে হয় বাড়িতে নেই আছি কোনও কয়লা খনিতে। দূষণের মাত্রা এতটাই বেশি যে প্রায়ই সকলেই বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন গ্রামে। অথচ কোনও অলৌকিক শক্তির বলে বলিয়ান কারখানা কর্তৃপক্ষ গ্রামবাসীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখছে না বারবার।
পাশাপাশি আন্দোলন করলে শাসকদলের হুমকি কারখানার কাজ থেকে বহিষ্কার করা হবে, এমনই গুরুতর অভিযোগ জানান ঝাঁজড়া গ্রামের বাসিন্দা তাপস চক্রবর্তী। যদিও এই অভিযোগ নিয়ে ফোনে তৃণমূল নেতা কল্যাণ মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তোলা এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাঁরাও চান গ্রামের দূষণ নিয়ন্ত্রণ হোক। তাঁরা সবসময় গ্রামবাসীদের পাশে আছেন এবং আগামী দিনেও থাকবেন।
এদিন সকাল সাতটা থেকে বেলার ন’টা পর্যন্ত চলে বিক্ষোভ। অবশেষে কারখানা কর্তৃপক্ষ গ্রামবাসীদের লিখিত আকারে তিন দিনের সময়সীমা চেয়ে নেয়। কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয় তিনদিনের মধ্যেই দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারখানা কর্তৃপক্ষের এই আশ্বাসের পর বিক্ষোভ তুলে নেন গ্রামবাসীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 17 =