আরামবাগ: আবারও চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগে রোগীর মৃত্যু ঘিরে হাসপাতাল চত্বর উত্তপ্ত হয়ে উঠল। ঘটনাটি ঘটেছে, আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজে ও হাসপাতালে। রাতে ইমার্জেন্সি বিভাগে ভাঙচুর চালানো হয়। পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার গাফিলতি ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন। মৃতের নাম মহুয়া বিবি (৫০)। বাড়ি পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের হোরপুরে। পরিস্থিতি সামলাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী নামানো হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতিতে বারবার মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে প্রশ্ন উঠছে। অসুস্থ মহুয়া বিবিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা এগারোটার সময় মৃত্যুর কথা জানায়। এরপরেই পরিবারের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ইমার্জেন্সি বিভাগে ভাঙচুর চালানো হয়। পরিস্থিতি সামলাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী ছুটে আসে। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকলে চিকিৎসক ও নার্সদের বিভাগে দেখা পাওয়া যায়নি। বিনা চিকিৎসায় ওই প্রৌঢ়া মারা যান। নাতনি পায়েল খান বলেন, আমার নানী সন্ধেবেলায় বাড়িতে বমি করেন। টোটো করে সন্ধে সাতটার সময় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। একজন নার্স ইঞ্জেকশন দেন। এরপরেই নানী বুকে জ্বালা করছে বলে জানান। চিকিৎসকদের ডাকার জন্য বিভাগে থাকা নার্সদের বারবার আবেদন করা হয়। কিন্ত কোনও চিকিৎসক আসেনি। এরপরে নার্সদেরও আর দেখা যায়নি। নানী বিনা চিকিৎসায় চোখের সামনে মারা গেলেন। নামী হাসপাতালে নিয়ে এসেও যদি চিকিৎসা পরিষেবা না মেলে তাহলে আমরা কোথায় যাব। এই মৃত্যু আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। স্বামী সবুর আলি খান বলেন, চিকিৎসা কর্মী ও নার্সরা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। চিকিৎসা না পেয়ে আমার স্ত্রী মারা গেলেন। তারপরেও দেখলাম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও তাপ উত্তাপ নেই। মৃতের পরিবারের পরিচিত চিরঞ্জিত ভুক্ত বলেন, পরিবারটি আমার পরিচিত। চিকিৎসা মিলছে না খবর পেয়েই রাতে হাসপাতালে ছুটে যাই। নিজের চোখে দেখলাম হাসপাতালের বেহাল চিকিৎসা পরিষেবা। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে প্রায় বিনা চিকিৎসায় একজন মারা গেলেন।
এই মৃত্যুর দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনওভাবে এড়াতে পারেন না। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রিন্সিপাল রমাপ্রসাদ রায় বলেন, হাসপাতালের তরফে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই সময় ইমার্জেন্সি বিভাগে চিকিৎসক না থাকার যে অভিযোগ উঠছে তা খতিয়ে দেখা হবে। নার্স ও চিকিৎসা কর্মীদের দুর্ব্যবহাররের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। তবে হাসপাতালের জিনিসপত্র ভাঙচুর চালানোর ঘটনা কাম্য নয় বলে মনে করি। আরামবাগের এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, হাসপাতাল চত্বরে উত্তেজনার খবর পেয়েই পুলিশ বাহিনী পাঠানো হয়। এখনও কোনও অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ হলে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভাঙচুর চালানো নিয়ে কোনও অভিযোগ করলে পুলিশ প্রশাসন পদক্ষেপ নেবে।