রাজীব মুখোপাধ্যায়, হাওড়া : কিছুদিন পূর্বেই দ্বিতীয় হুগলি সেতুর উপর গাড়ির চাপ কতটা, তা সরেজমিনে পরীক্ষা করে দেখেছেন কারীগরিবীদরা। এই কাজের জন্য বেশ কয়েক ঘন্টা সেতুর উপরে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। সেই সংক্রান্ত রিপোর্টও জমা পরে সংশ্লিষ্ট দফতরে। সূত্রের খবর সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারী গাড়ির চাপে দ্রুত ‘বৃদ্ধ’ হচ্ছে দ্বিতীয় হুগলি সেতু। সেই চাপ কমাতে এবার গঙ্গার নীচ দিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করে শালিমারে ট্রাক পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের সমীক্ষার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সব ঠিকঠাক চললে বন্দর লাগোয়া রাস্তা ও দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ওপর গাড়ির চাপ অনেকাংশে কমবে। বন্দর সূত্রের খবর, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনায় ঠিক হয়েছে বিদ্যাসাগর সেতু ও হাওড়া সেতুর ওপর চাপ কমাতে চালু হবে রো-রো ফেরি। এই ফেরির মাধ্যমে কলকাতা বন্দর থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক হুগলি নদী পেরিয়ে সরাসরি পৌঁছে যাবে শালিমারে ও সাঁকরাইলে। এক একটি জলযান এক একবারে ৮টি করে ট্রাক বহন করতে পারবে। এর ফলে রাস্তার উপরেও যেমন চাপ কমবে তেমনই কমবে যানজট, এমনটাই মনে করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
হাওড়ার শালিমারে রয়েছে কলকাতা বন্দরের জমি৷ সেখানে রয়েছে একটি জেটিও। ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকার বিশাল জায়গাও রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে। রো-রো ফেরি পরিষেবা চালু করার জন্য প্রযুক্তিগত সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বেলজিয়াম থেকে৷ আগামী সপ্তাহেই তারা কলকাতাতে আসছেন বলে জানা যাচ্ছে। এই কাজে বন্দরকে সাহায্য করবে রাজ্য সরকার। আরও জানা গিয়েছে, কলকাতা বন্দরের দুটি ডক খিদিরপুর ও নেতাজি সুভাষ ডক থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার পণ্যবাহী লরি চলাচল করে। এছাড়া রয়েছে কন্টেনার নিয়ে যাওয়ার জন্য বড় বড় ট্রেলার। এর ফলে নিত্যদিন ব্যাপক যানজট তৈরি হয় বন্দর এলাকায়। এছাড়া রাতে একের পর এক কন্টেনার বোঝাই গাড়ি শহরের রাস্তা ও মূলত বিদ্যাসাগর সেতু ব্যবহার করে৷ আপাতত, বিদ্যাসাগর সেতু সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ চাইছে গঙ্গায় টানেল তৈরি করতে। যার মাধ্যমে একসাথে কন্টেনার বা পণ্যবাহী লরি যাতায়াত করতে পারবে৷ সেই কাজ যতদিন না শুরু হচ্ছে ততদিন রো-রো পরিষেবা চালাতে চায় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর। কলকাতা বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে দ্বিতীয় হুগলি সেতু বা নিবেদিতা সেতু দিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেয় ট্রাকগুলি। যার ফলে বিশেষ করে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর ওপর ব্যাপক চাপ পড়ছে। ঝুলন্ত এই সেতু তাই দ্রুত ‘বৃদ্ধ’ হচ্ছে। এই চাপ কমাতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে শালিমার ও বন্দরের মধ্যে রো-রো ফেরি চালানোর পরিকল্পনা করেছিল কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অত ঝক্কি না করে এবার সরাসরি গঙ্গার নীচে সুড়ঙ্গ খোড়ার পরিকল্পনা করছে তারা। কলকাতা বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, গঙ্গার নীচে সুড়ঙ্গ তৈরির জন্য সমীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি বিদেশি সংস্থাকে। দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের। দেশে প্রথম নদীর নীচ দিয়ে ট্রেন চালানোর জন্য সুড়ঙ্গ খুড়ে নজির গড়েছে কলকাতা। ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ খোড়ার কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এবার সুড়ঙ্গপথে বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হলে তাও হবে দেশের মধ্যে প্রথম।