কালীপুজোয় বোলতলা মন্দির প্রাঙ্গণে সিদুঁর খেলেন বধূরা

নিজস্ব প্রতিবেদন, কাটোয়া: পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার মুস্থূলি গ্রামের জাগ্রত মা কালী ‘মেজঠাকরুন’ নামে পরিচিত। মুস্থূলি গ্রামের এই মা কালী এলাকায় ‘বোলতলা’ কালী নামেও খ্যাত। বোলতলা কালীমায়ের পুজো প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো।
শোনা যায়, প্রায় ৩০০ বছর আগে এক তান্ত্রিক বকুল গাছের তলায় ছোট মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেছিলেন। সেই তান্ত্রিক মারা যাওয়ার পর তাঁর নির্দেশ মতো সেখানেই তাঁকে সমাধি দেওয়া হয়েছিল। পরে ভক্তদের অনুদানে দেবীর মন্দির তৈরি হয়। স্থানীয় জমিদাররা বেশ কিছুদিন পুজো করেছিলেন। জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দা রানি দাসকে পুজোর দায়িত্ব দিয়ে যান।
রানি দাসের উত্তরসূরি অশোক কুমার দাস জানিয়েছেন, চার পুরুষ ধরে তাঁরা পুজো করছেন। বর্তমানে এটি বারোয়ারি পুজো হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুজো কমিটির একটি ট্রাস্টও গঠন করা হয়েছে এবং ওই ট্রাস্ট দু’বছর ধরে পুজো পরিচালনা করছে। এলাকার বর্ষীয়ান এক প্রাক্তন শিক্ষক দিলীপ চট্টোপাধ্যায় ও নিতাই চন্দ্র ঘোষ জানিয়েছেন, ঘোড়ানাশ, মুস্থূলি, আমডাঙা ও একড়েলা গ্রামের গৃহবধূরা দল বেঁধে কালীপুজোর দিন বেলা তিনটে থেকে বোলতলা মায়ের মন্দির প্রাঙ্গণে জড়ো হন সিদুঁর খেলতে। স্থানীয় গ্রামবাসীদের কাছে সেই সিদুঁর খেলার নাম ‘এয়োতি বরণ’ বা ‘ঠারোগো পান’। দেবীকে পান, সুপারি, কলা দিয়ে বরণ করার পর দু’-তিন ঘণ্টা ধরে চলে সিদুঁর উৎসব। পুজোর দিন রাতে দেবীর মূর্তিতে রঙ করা হয়। রাত বারোটার পর শুরু হয় দেবীর পুজো।
দেবীর গায়ে পড়ানো হয় স্বর্ণ ও রৌপ্য অলঙ্কার। সারা বছর ব্যাঙ্কের লকারে দেবীর গয়না রাখা থাকে। পুজোর সময় তা নিয়ে এসে দেবীর মূর্তিতে পড়ানো হয়। দেবীর উচ্চতা প্রায় ১১ ফুট। প্রায় ৮০-১০০টি ছাগ বলি হয় এখানে। মুস্থূলি গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বোলতলা দেবীর পুজোর সব থেকে আকর্ষণ হল বিসর্জন। সেইজন্য প্রতিমা বিসর্জনের সময় বেহারা ঠিক করতে হয় না। দেবীর মূর্তিকে কাঁধে নেওয়ার জন্য বাসিন্দাদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। পাটকাঠির মশালের আলোয় প্রতিমাকে নিয়ে বাহকরা দৌড়তে দৌড়তে পাশের গ্রাম আমডাঙায় নিয়ে যান। সেখানে বুড়ো শিবের সঙ্গে দেখা করে আসার পর মন্দিরের পাশের পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এটাই রীতি। আর এই বিসর্জন দেখতে রাস্তার ধারে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে আজও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 + seven =