আরামবাগের রতনপুরে মা কালীর বুকে পা তুলেই পুজোপাঠ বর্গক্ষেত্রীয় পুরোহিত ঠাকুরের

হুগলি জেলার মধ্যে কালীপুজোর সংখ্যা অসংখ্য। প্রচলিত প্রথার বাইরে গিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব পদ্ধতিতে পুজো করে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছেন এক বর্গক্ষেত্রীয় পুরোহিত ঠাকুর। এই পুরোহিত ঠাকুরের নাম কালীশঙ্কর সাঁতরা। বাড়ি হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমার রতনপুর গ্রামে। তবে এখন তিনি গ্রামের মন্দিরেই থাকেন।

এদিন নিজস্ব ঘরনায় মায়ের সামনে কাঁচের ওপর নিত্য করার পর মা কালীর বুকে পা তুলে মায়ের আরাধনা শুরু করেন। এদিন কাচের টুকরোর ওপর দাঁড়িয়ে তিনি নাচতে নাচতে পুজো পুজো শুরু করেন। কাঁসরঘণ্টা, শাঁখের আওয়াজে মন্দির চত্বর পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। মায়ের ভক্তিরসে আবিষ্ট হয়ে পূজারি কালীশঙ্কর তখন ওই ভাঙা কাচের ওপর গড়াগড়ি দেন। তবে পুজোর সময় তিনি শাস্ত্রীয় মন্ত্র পাঠ করলেন না। নিজের বাঁধা গান, নিজের সুর দিয়ে গেয়ে দেবীর পুজো শুরু করেন। অসংখ্য পুণ্যার্থী তা দেখেন। মা নাকি এই ভাবেই পুজো গ্রহণ করেন। আরামবাগের রতনপুরের আদ্যা শক্তি মহামায়া (বড়মা) মাহাত্ম্য নাকি এই ভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে। আর তা দেখতে প্রতি বছরের মতো এ বছরও অসংখ্য পুণ্যার্থীর আগমন ঘটে। এই বিষয়ে শ্রী শ্রী ঠাকুর কালী শঙ্কর বলেন, এটাই আমার বাড়িঘর সবই। এই পুজোয় আলাদা কোনও প্রতিমাশিল্পী নেই। নেই আলাদা পুরোহিতও। তিনি নিজেই প্রতিমা গড়েছেন, নিজেই পুজো করেন।

ভালো মন্দ কিছু জানি না। মা যা বলেন তাই করি। সকল মানুষের কল্যাণ হোক। জানা গিয়েছে, খুব ছোট থেকেই কালীশঙ্কর নিজে নিজেই ছোট ছোট মাটির প্রতিমা তৈরি করে খেলতেন। আর সেই কাজে সারাদিন তিনি এতটাই মগ্ন হয়ে থাকতেন যে বাবা, মা অতিষ্ঠ হয়ে উঠতেন। খেলার ছলে প্রতিমা গড়তে গড়তে তিনি একটি বড় প্রতিমা গড়ে ফেলেন। কিন্তু তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ন’বছর। এত বড় প্রতিমাতে পুজো করার জন্য তাঁর হাত পৌঁছছিল না। তখন তিনি কালীমায়ের বুকে পা রেখে নিজেই পুজো শুরু করেন। তাই এখনও সেই প্রথা মেনে মা কালীর বুকে পা রেখেই তিনি এই বছরও পুজো করেন।

বর্তমানে প্রতিমা ও মন্দির ২০০৮ সালে ভক্তরাই তৈরি করে দিয়েছেন। কালীপ্রতিমাটি কোষ্ঠিপাথরের তৈরি। আর মনসা ও শীতলা সিমেন্টের। সারাবছরই মা কালীর নিত্যপুজো হয়। তবে শনি, মঙ্গলবার ও অমাবস্যায় মায়ের বিশেষ পুজো হয়। আর প্রতি বছর শ্যমাপুজোর দিন তিনদিন মেলা বসে। এই বিষয়ে স্থানীয় মানুষের দাবি, এই পুজোর দিন অসংখ্য ভক্তের সমাগম হয়। প্রতি বছরই মায়ের কাছে পুজো দিতে আসেন অসংখ্য ভক্ত। এই বছরও বহু ভক্তের সমাগম হয়েছে। সবমিলিয়ে আরামবাগের রতনপুর এলাকার এই মা কালীর পুজোকে ঘিরে আলাদা একটা উন্মাদনা দেখা যায় ভক্তদের মধ্যে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × three =