নিশি রাতে রায় জমিদারের দেওয়া মা দক্ষিণাকালীর মঙ্গল ঘট মাথা করে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আরামবাগের হামিরবাটির বাসিন্দা তারাচাঁদ সর্বেশ্বর। এই ঘটনা প্রায় ৪৫০ বছর আগের। জমিদার বাড়ির পুরোহিত ছিলেন তারাচাঁদ সর্বেশ্বর। পরে এই বংশ ভট্টাচার্য পরিবার নামে খ্যাত হয়। গরিব ভট্টাচার্য পরিবারে মা দক্ষিণা কালীরূপে প্রতিষ্ঠিত হলেও কোনও সময়ই মায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি। ঘটে পুজোপাঠ হয়ে আসছে। মা কালীর মঙ্গল ঘট প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যেই মা কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে মা কালীর দুই পাশে শীতলা ও মা মনসার ঘট প্রতিষ্ঠিত হয়। এই জাগ্রত মা কালীকে ঘিরে নানা জনশ্রুতি এখনও ওই এলাকার মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়।
ভট্টাচার্য পরিবারেরই বর্তমান বংশধর তারানাথ ভট্টাচার্য জানান, এই মা দক্ষিণাকালী তাদের ছিল না। হামিরবাটির রায় জমিদারদের কাছ থেকে আনা হয়। মায়ের কৃপায় মৃত জমিদার জীবিত হয়ে উঠেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। জানা গেছে, রায় জমিদার বংশের একজন বংশধর মারা যায়। তারপর তার মা কাঙালীনি হয়ে যান। কান্নায় ভেঙে পড়েন। মা কালীর ভক্ত ওই মহিলার কাছে ওইদিন এক সন্ন্যাসীর উদয় হয়। ভিক্ষা স্বরূপ মৃত ছেলেকে ওই সন্ন্যাসীর হাতে তুলে দেন। সন্ন্যাসী তখন মা কালীর পুজোর ব্যবস্থা করতে বলেন। পুজোর ব্যবস্থা করেন জমিদার গিন্নি। পুজোপাঠের পর সন্ন্যাসী মৃত ছেলের মুখে পুজোর স্নান জল দেন এবং ফুল মাথায় দিয়েছেন। তারপরই বেঁচে ওঠে জমিদার পুত্র। জটাধারী সন্ন্যাসী মা কালীর দ্রুত হয়ে জমিদার বাড়িতে এসেছিলেন। ওই বাড়িতে সন্ন্যাসী দুধ ও খই খেয়েই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে জমিদার বাড়ির অনিয়মের জন্য তারাচাঁদ সর্বেশ্বরকে স্বপ্নাদেশ দেন মা কালী।
একই ভাবে জমিদার বাড়ির কর্তাকেও স্বপ্নাদেশ দিয়ে ঘর ছাড়ার কথা বলেছিলেন। তাই তারাচাঁদ সর্বেশ্বরের হাতে নিশি রাতে মা কালীকে তুলে দেন রায় জমিদার। জানা গেছে, বিশেষ রীতি নীতি মেনে পুজো পাঠ হয়। পুজোর দিনে ও রাতে দুই বার পুজো হয়। দিনের বেলা পুজোপাঠের পর মা মনসা ও শীতলার ঘট পাশেই দেবাদিদেব মহাদেবের মন্দিরে রাখা হয়। তারপর রাতে বিশেষ পুজোপাঠা হয় মা দক্ষিণা কালীর। মায়ের পুজোতে চিংড়ি মাছ, মুলো শাক ভাজা ও মা কালীর নামে প্রতিষ্ঠিত পুকুর থেকে সবচেয়ে বৃহৎ আকারের দুটি মাছে অন্ন ভোগের সঙ্গে দেওয়া হয়। মাছ নিয়ে একটি অলৌকিক ঘটনা রয়েছে।
বংশধর তারানাথ ভট্টাচার্যের দাবি, একবার পুকুরের জল একেবারে শুকিয়ে গিয়েছিল। পুজোর আগের দিন গ্রামের চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন মাছ কিভাবে আসবে। হঠাৎ করেই পুজোর আগের দিন রাতে বৃষ্টি হয় এবং পুকুরের সামান্য জল জমে যায়। সেই জলেই জাল ফেলা হয় মা কালীর নাম করে। তারপরই অলৌকিকভাবে দুটি বৃহৎ আকারের রুই মাছ ওঠে। আরও অনেক বার ওই সামান্য জলে জাল ফেলা হলেও কোনও মাছ ওঠেনি। ছাগবলির প্রচলন থাকলেও রান্না করে মায়ের কাছে ভোগ নিবেদন করতে হয় এবং ভক্তদের মাটিতে বসেই সেই অন্ন ভোগ খেতে হয়। এমনটাই জানান বংশধর শচীকান্ত ভট্টাচার্য ও বর্তমান কুলবধূ কৃষ্ণা ভট্টাচার্য। সবমিলিয়ে এখনও রীতি মেনে মা দক্ষিনা কালীর পুজোপাঠ হয়ে আসছে আরামবাগের হামিরবাটির ভট্টাচার্য পরিবারে।