দেবীর দুর্গার ভোগ হিসাবে নানান ধরনের চকলেট নিবেদন করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি দেওয়া হলেও দেবীর মূলপ্রসাদ হচ্ছে চকলেট। প্রায় ১২৭ বছরের পুরনো মালদার জানকি পরিবারের পুজোর এই রীতি আজও নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে চলে আসছে। বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন ১৭ ভাই ও ১৬ বোন। সকলে মিলেই পুজোর আয়োজন করেন।
মালদ ইংরেজবাজার শহরের মকদমপুর এলাকায় বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত ঠাকুর দালানে পুজো হয়। তবে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল অবিভক্ত বাংলার কানসার্ট গ্রামে। দেশ ভাগের পর ১৯৫৯ সালে জানকি পরিবার মালদায় চলে আসে। পরিবার সহ দেবী দুর্গার কাঠামোর কিছুটা অংশ নিয়ে আসেন এখানে। পুজোর প্রতিষ্ঠাতা জানকি নাথ কুণ্ডু। সেই কাঠামোয় পুজো হয়ে আসছে এখনো। প্রতিমা বিসর্জনের পর কাঠামো নিয়ে এসে মন্দিরে রাখা হয়। বছরভর পরিবারের মহিলারা এই কাঠামো পুজো করেন।
পরিবারের এক সদস্য শ্যামল প্রসন্ন কুণ্ডু জানিয়েছেন, পুজোর প্রতিষ্ঠাতা জানকি নাথ তাঁর নয় ছেলে মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। বর্তমানে পরিবারে পঞ্চম পুরুষেরা অংশগ্রহণ করছেন পুজোয়। মন্দিরেই হয় প্রতিমা তৈরি। পুরনো রীতি মেনেই এখনো পুজো হয়। পরিবারে পুরুষেরা এক সময় মাকে সাজাতেন। তবে বর্তমানে সময়ের অভাবে তা আর হয় না। এখন মৃৎশিল্পী নিজেই প্রতিমাকে সাজান। সপ্তমীর দিন একটি ডালা বসে মন্দিরে। সেই ডালায় তিসির তেলের প্রদীপ জ্বালোনো হয়। রীতি রয়েছে নবমী পর্যন্ত এই প্রদীপ নেভানো যাবে না। প্রদীপ নিভলে পরিবারের নাকি অমঙ্গল হবে। তাই পরিবারের সকলে রাত জেগে তিনদিন ব্যাপী এই প্রদীপ নিভতে দেন না।
ওই পরিবারের আরেক সদস্য দীপিকা কুণ্ডু জানিয়েছেন, পুজোয় মিষ্টান্ন প্রসাদ খুব কম দেওয়া হয়। বিভিন্ন রকমের চকলেট সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত পুজোয় দেওয়া হয়। প্রতিদিন চকলেটের লুঠ দেওয়া হয়। সঙ্গে অবশ্য খুব অল্প পরিমাণ বাতাসা দেওয়া হয়। পুজোর সূচনা থেকেই চকলেট দেওয়া হয়। তবে এখন বিভিন্ন প্রকার চকলেট বাজারে এসেছে। প্রায় সমস্ত ধরনের চকলেট কমবেশি দেওয়া হয় লুঠে।