ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে ৫০০ বছরের পুরনো চিল্কিগড়ের কনক দুর্গা মন্দিরের পুজোয় দেবীকে এক অন্য ধরনের ভোগ নিবেদন করা হয়। দেবী পুজোর শুরুতেই দিব্য ভোগের উপকরণ হিসেবে হাঁসের ডিম যোগ করা হয়। এই দুর্গাপুজো চিল্কিগড়ের কনক দুর্গা মন্দিরে হয়ে থাকে। যার সূচনা হয়েছিল ১৭৪৯ সালে। দুলুং নদীর তীরে অবস্থিত চিল্কিগড়ের রাজা, গোপীনাথ সিং স্বপ্নে চামুন্ডা দর্শন করেছিলেন। তারপর থেকেই তিনি এই পুজো শুরু করেন।
জঙ্গলের মাঝখানে মন্দির তৈরি করে চতুর্ভুজা কনক দুর্গা মূর্তি স্থাপন করেন। তৈরি হয় একটি ঘোড়া। জানা যায়, রাজার তিন রানির হাতের শাঁখা ও সোনার কাঁকন দিয়ে এই দেবী মূর্তি তৈরি হয় বলে দেবীর নাম রাখা হয় কনক দুর্গা। এখানকার দেবী অস্ত্র বাহিনী এবং নীলবসনা। প্রথমদিকে এখানে নরবলির প্রচলন ছিল। রাজার বড় রানি গোবিন্দমণির নির্দেশে নরবলি প্রথা বন্ধ হয়। তার বদলে শুরু হয় নিশা বলি। অষ্টমীর রাতে জঙ্গলের মাঝে নির্জন জায়গায় একটি পাঠা বলি দেওয়া হয়। যার নাম নিশা বলি। এই বলির পাঁঠার মাংস রান্না করে নবমীর অন্য ভোগের সঙ্গে দেবীকে নিবেদন করা হয়। এই ভোগকে বিরাম ভোগ বলে। এখানকার দেবী পুজোয় সেই নিয়মই চলে আসছে।
এছাড়াও দেবীর পুজোর ভোগে থাকে রান্না করা বিভিন্ন সবজির ব্যঞ্জন। থাকে মাংস, খিচুড়ি, হাঁসের ডিম এবং মাছ। এই ভোগকে গঞ্জভোগ বলে। মহাষ্টমীর দিন কালো ছাগলের মাংস ভোগ হিসেবে চড়ানো হয়। নবমীর দিন দেবীকে সন্তুষ্ট করতে শতাধিক ছাগল, ভেড়া এবং একটি মহিষ বলি দেওয়া হয়। খিচুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া নবমীর দিনের ছাগল ও ভেড়ার মাংসের ভোগ খেতে দশমীর দিন প্রতিবছর অসংখ্য মানুষের সমাগম হয় কনক দুর্গা মন্দিরে। কারণ এই দিন সেই ভোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলি করা হয়।