বিখ্যাত ব্যবসায়ী থেকে কুখ্যাত যুদ্ধপতি। ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের জীবন ছিল এমনই বর্ণময়। একসময় হয়ে উঠেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিশ্বস্ত সহচর। যুদ্ধের ময়দান কাঁপানো সেই প্রিগোজিনকেই সমাধিস্ত করা হল লোকচক্ষুর আড়ালে। ‘বিদ্রোহী’ এই নেতার সঙ্গেই মাটির তলায় চাপা পড়ে গেল তাঁর মৃত্যু রহস্য।
গত বুধবার রুশ সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গগামী এক বেসরকারি সংস্থার এমব্রেয়ার লিগ্যাসি বিমান তেভর এলাকার কুজেনকিনো গ্রামের কাছে ভেঙে পড়ে। গুঞ্জন ছড়িয়েছিল সেই বিমানে ছিলেন ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। নানা জল্পনাকল্পনা, বিতর্কের পর গত রবিবার রাশিয়ার তদন্তকারী কমিটি ওয়াগনার প্রধানের মৃত্যুর খবরে শিলমোহর দেয়। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার প্রিগোজিনকে পোরোখভস্কয়ের কবরস্থানে লোকচক্ষুর আড়ালে সমাধিস্থ করা হয়েছে বলে খবর। প্রায় নীরবেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে ওয়াগনার প্রধানের মুখপাত্র জানিয়েছেন, যাঁরা যাঁরা প্রিগোজিনকে শ্রদ্ধা জানাতে চান, তাঁরা পোরোখভস্কয়ের কবরস্থানে যেতে পারেন।
অন্যদিকে, সূত্রের খবর, মঙ্গলবারই ব্রাজিলের বিমান কর্তৃপক্ষকে রাশিয়া সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এই বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে তদন্ত করা হবে না। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটি যেহেতু ব্রাজিলের একটি সংস্থার তাই এই ঘটনার তদন্ত যৌথভাবে হওয়ার কথা ছিল আন্তর্জাতিক আইন মোতাবেক।
উল্লেখ্য, বিখ্যাত ব্যবসায়ী থেকে কুখ্যাত যুদ্ধপতি হয়ে ওঠা প্রিগোজিনের যাত্রাপথ ছিল দুর্র্ধষ। রাঁধুনি হিসেবে কেরিয়ার শুরু করার পর ক্রমেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিতর্কিত চরিত্র। একসময় তাঁকে বলা হত ‘পুতিনের রাঁধুনি’। আসলে ক্রেমলিনে খাবার সরবরাহ করত প্রিগোজিনেরই রেস্তোরাঁ ও কেটারিং সংস্থা। ধীরে ধীরে কুখ্যাত ভাড়াটে ওয়াগনার বাহিনীর সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর ইউক্রেন যুদ্ধেও নিজের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন প্রিগোজিন। কিন্তু পুতিনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের চির ধরে এই রণক্ষেত্র থেকেই। দু’মাস আগেই রুশ সামরিক প্রধানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে গোটা বিশ্বে আলোড়ন ফেলে দেন প্রিগোজিন। হয়ে ওঠেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের মাথা ব্যথার কারণ। ফলে ‘বিদ্রোহী’ নেতার মৃত্যুর খবর শিরনামে আসতেই নানা মহল দাবি করেন তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। আর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে পুতিনের দিকেই। কিন্তু প্রিগোজিনের মৃত্যু ঘিরে যা যা প্রশ্ন উঠেছিল তার উত্তর কার্যত ধামা চাপাই পড়ে গেল।