জোড়া অঙ্গ প্রতিস্থাপনে নজির পিজির

একই শরীরে জোড়া অঙ্গ প্রতিস্থাপনে নজির গড়ল পিজি। বিহারের বছর ৩৪-এর অমিত কুমারের দু’টি কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছিল আগেই। এরপর হেপাটাইটিস-সি সংক্রমণের জেরে লিভার সিরোসিসও হওয়ায় লিভারও অকেজো হয়ে পড়ে। দু’টি অঙ্গেরই প্রতিস্থাপন ছাড়া বাঁচানোর কোনও উপায় ছিল না অমিতকে। শুধু লিভার প্রতিস্থাপন করলে কিডনির অভাবে বা কেবল কিডনি প্রতিস্থাপন করলে লিভারের অভাবে অবশেষে বুধবার স্বরূপনগর গয়েশপুরের বাসিন্দা বছর আটচল্লিশের জগদীশ মণ্ডলের ব্রেন ডেথের সূত্র ধরে প্রাণ বাঁচানো গেল অমিতের। আর এই সূত্রেই নজির গড়ল এসএসকেএম হাসপাতাল বা পিজি। শুক্রবার পূর্ব ভারতে এই প্রথম একই গ্রহীতার শরীরে সেখানে কিডনি ও লিভার দু’টি মরণোত্তর অঙ্গই প্রতিস্থাপিত হল একসঙ্গে।

এদিকে সূত্রে খবর, কালীঘাট বাজারের কাছে রাস্তা পেরোতে গিয়ে মাথায় মারাত্মক আঘাত নিয়ে পিজি-র ট্রমাকেয়ার সেন্টারে সোমবার থেকে ভর্তি ছিলেন জগদীশ। বুধবার ব্রেন ডেথ ঘোষণা করতেই তাঁর পরিবার মরণোত্তর অঙ্গদানে সম্মতি দেয়। অন্যান্য অঙ্গের গ্রহীতা মেলার পাশাপাশি রোটো-র আধিকারিকরা দেখেন, বিহারের বাসিন্দা যুবকের কিডনির এইএলএ ম্যাচিং এবং লিভারের ব্লাড গ্রুপ ম্যাচিং- দুটো একেবারে যথাযথ। তার পরেই জোড়া প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এই প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া সম্পর্কে এসএসকেএমের হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী জানান, ‘এমন জোড়া প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে প্রথমে লিভার ও পরে কিডনি প্রতিস্থাপনের অপারেশন করা হয়। তাতেও দীর্ঘক্ষণের অ্যানাস্থেশিয়ায় চ্যালেঞ্জ থাকে। বহু চেষ্টায় যে আমরা সেটা করতে পারলাম, তা একটা বিরাট ব্যাপার।’ এসএসকেএম সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল ৮টা নাগাদ শুরু হয়ে প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা ধরে চলে লিভার প্রতিস্থাপন। সেই অস্ত্রোপচার মিটে যাওয়ার পর বিকেল চারটে নাগাদ শুরু হয়ে ঘণ্টা দুয়েকের মাথায় শেষ হয় কিডনি প্রতিস্থাপন।

এদিকে শৈশবেই কিডনির অসুখে আক্রান্ত হন বিহারের অমিত। ২০০৮ থেকে কলকাতায় চিকিৎসা চলছে তাঁর। বছর ছয়েক ধরে চলছে লাগাতার ডায়ালিসিস। দাদার সঙ্গে দক্ষিণ কলকাতার একটি ভাড়া বাড়িতে থাকছিলেন তিনি। বাবার দান করা কিডনি নিয়ে প্রতিস্থাপনের জন্য পিজিআই চণ্ডীগড়ে গিয়ে দেখা যায়, হেপাটাইটিস-সি সংক্রমণও রয়েছে তাঁর। সে যাত্রায় আর প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়নি। কলকাতায় ফিরে ডায়ালিসিসের সঙ্গেই শুরু হয় হেপাটাইটিস-সি সংক্রমণের চিকিৎসা। ২০২০-তে পেটে জল জমার পর বোঝা যায়, লিভারে তাঁর সিরোসিস হয়ে গিয়েছে। তার পর থেকেই প্রতিস্থাপনের জন্য মরণোত্তর লিভার ও কিডনির খোঁজ চলছিল।

এসএসকেএমের এই জোড়া অঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্পর্কে রিজিওনাল অর্গান অ্যান্ড টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন (রোটো)-এর কর্তারা জানান, এ যাবৎ গোটা দেশে একসঙ্গে জোড়া অঙ্গ প্রতিস্থাপনের নজির রয়েছে ২১টি। লাং-হার্ট, লিভার-প্যানক্রিয়াস ইত্যাদির মতো প্রতিস্থাপন ছিল সেগুলি। পিজি-তে এ দিন হলো দেশের ২২তম জোড়া প্রতিস্থাপন। এদিকে এসএসকেএম সূত্রে খবর, জগদীশের অন্য কিডনিটি পেয়েছেন এসএসকেএমেই চিকিৎসাধীন বছর ৩২-এর এক যুবক। মরণোত্তর হার্ট প্রতিস্থাপিত হয়েছে মেডিকায় চিকিৎসাধীন বছর ৪০-এর এক রোগীর বুকে। জগদীশের কর্নিয়া দু’টি ও ত্বকও সংগ্রহ করেছে এসএসকেএম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − two =