একজন চৌষট্টি খোপের জগতের কিংবদন্তি। অন্যজন ১৮ বছরের উঠতি প্রতিভাবান দাবাড়ু। আজারবাইজানের FIDE দাবা বিশ্বকাপের ফাইনালে চলল অভিজ্ঞতা বনাম তারুণ্যের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। প্রথম গেম ড্র। দ্বিতীয় গেমও ড্র। তিনদিন ধরে দাবা ফাইনালের ফয়সালা হল রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে। দুটি ক্লাসিকাল রাউন্ড ড্র হওয়ার পর টাইব্রেকারেও চলল টানটান লড়াই। শেষমেশ জয়ী ম্যাগনাস কার্লসেন। ২০০০ ও ২০০২ সালে দাবা বিশ্বকাপ জিতেছিলেন বিশ্বনাথন আনন্দ। তাঁর পথ অনুসরণ করে ভারতীয় দ্বিতীয় দাবাড়ু হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে পা রাখেন রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। ইতিহাস গড়ে ফেলেছিলেন সেদিনই। ২১ বছর পর কোনও ভারতীয় দাবা বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ হাসি ফুটল না প্রজ্ঞার মুখে। একদিন আগেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে পা রেখেছে ভারত। দাবা বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই আনন্দে উদ্বেল দেশবাসীকে উদযাপনের আরও এক কারণ দিতে চেয়েছিলেন প্রজ্ঞানন্দ। তা যদিও হল না। কিন্তু তিনি রানার্স হওয়ায় দেশবাসী আজ তাঁকে নিয়েও গর্বিত। বৃহস্পতিবার ফাইনালের প্রথম টাইব্রেক জিতে যান ম্যাগনাস কার্লসেন। ৪৭ মুভের পর দারুণ ফিনিশিংয়ে প্রথম টাইব্রেকে জিতে ১-০তে লিড নেন নরওয়ের কিংবদন্তি। ফলে প্রজ্ঞানন্দের কাছে ডু অর ডাই পরিস্থিতি দাঁড়ায়। দ্বিতীয় টাইব্রেক জিততেই হত ১৮ বছরের দাবাড়ুকে। কিন্তু সেখানেও প্রজ্ঞাকে হারিয়ে দেন ম্যাগনাস। ফলে রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট হতে হল প্রজ্ঞাকে। আর এ বারের দাবা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হলেন নরওয়ের কার্লসেন। প্রজ্ঞা বিশ্বের এক নম্বর দাবাড়ুকে হারিয়ে দিতে পারলে সেটা কোনও অঘটন হত না। কারণ অতীতে একাধিক বার কার্লসেনকে হারিয়েছেন তিনি। তাই অভিজ্ঞ দাবাড়ুর বিরুদ্ধে ফাইনালে এক ইঞ্চিও জমি ছেড়ে দিতে রাজি ছিলে না। অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে টাইব্রেকার পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলেন। সেমিফাইনালে বিশ্বের তিন নম্বর দাবাড়ু ফ্যাবিয়ানো কারুয়ানার বিরুদ্ধেও টাইব্রেকারে জেতেন ভারতীয় দাবাড়ু। দুটি ক্লাসিকাল রাউন্ড ড্র হওয়ার পর টাইব্রেকারে মার্কিন দাবাড়ুকে হারিয়ে দেন। ৩.৫-২.৫-এ জিতেছিলেন। ফাইনালে ওঠার পথে বিশ্বের দ্বিতীয় হিকারু নাকামুরাকেও হারান প্রজ্ঞা। FIDE বিশ্বকাপে ব়্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা ম্যাগনাস কার্লসেনের বিরুদ্ধে জেতাটাই বাকি ছিল। তবে ফাইনাল ম্যাচে ষোলকলা পূর্ণ হল না ভারতীয় গ্র্যান্ডমাস্টারের। প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে বিশ্বনাথন আনন্দের গড়া ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারলেন না।