টানা ১৮ ঘণ্টা সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর পুরনো অফিসে তল্লাশি চালান ইডির আধিকারিকেরা। এরপর মঙ্গলবার ভোরে যখন তদন্তকারীরা নিউ আলিপুরে অবস্থিত ওই অফিস থেকে বের হন তখন তদন্তকারী আধিকারিকদের হাতে ছিল তিনটি ব্যাগ। সূত্রের খবর, এখান থেকে বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করেছেন তদন্তকারীরা। সোমবার দুপুরের পর থেকে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র পুরনো অফিস ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ -এ হানা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। রাতভর সেখানে তল্লাশি চলে ইডির।
সূত্রের খবর, বিষ্ণুপুর প্ল্যান্টের দুটি কম্পিউটার ঘেঁটে দেখেছেন অফিসাররা। একাধিক নথি প্রিন্ট আউট করে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন অফিসাররা। জল কোথায় কোথায় সরবরাহ করা হত, সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছেন তদন্তকারীরা। সংস্থার বছরের আয়ব্যয় কত? সেই হিসেবে নজর ইডি-র। কোনও ঋণ আছে কিনা, থাকলে কোথা থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে।
সোমবার রাতভর তল্লাশিতে সংস্থার নিউ আলিপুরের অফিস থেকে উদ্ধার হয়েছে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিপুল নথি। উদ্ধার বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে মউ এবং চুক্তিপত্র। সংস্থার কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নথি। সেই নথি থেকেই হদিশ মিলেছে একাধিক বড় অঙ্কের লেনদেনের এসডি কনসালট্যান্সি ছাড়াও একাধিক নির্মাণ সংস্থার থেকে টাকা ঘুরপথে টাকা ঢুকেছে ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডসের’ অ্যাকাউন্টে। এই অভিযানের পর তদন্তকারীদের ইঙ্গিত, এই লেনদেন সন্দেহজনক যে নির্মাণ সংস্থাগুলো থেকে টাকা ঢুকেছে, সেগুলো অধিকাংশই শেল কোম্পানির মতো কাজ করে। ঘুরপথে কাল টাকা ঢুকেছে ইঙ্গিত গোয়েন্দাদের প্রকাশ্যে আসছে একাধিক নির্মাণ সংস্থার নাম ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস ইনফ্রা কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেড’ সংস্থার প্রাক্তন কিছু ডিরেক্টরের নামে থাকা এক গুচ্ছ কোম্পানির হিসাব তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে।
সোমবার শহরের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালায় ইডি। মূলত কালীঘাটের কাকুর সঙ্গে যোগ রয়েছে এমনই কিছু জায়গায় যান তদন্তকারীরা। কাকুর আলিপুরের ফ্ল্যাটে যেমন তল্লাশি চালিয়েছে ইডি, গিয়েছিল তাঁর জামাইয়ের ফ্ল্যাটেও। যায় লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস অফিসেও। রাতভর সেখানে ইডি তদন্ত চালায়। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হন কালীঘাটের কাকু। ইতিমধ্যেই ইডির চার্জশিটে সুজয়কৃষ্ণর নামের উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্তকারীদের ধারনা, এই মামলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন সুজয়কৃষ্ণ।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর পদে ছিলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। তাঁরই সংস্থা এসডি কনসালটেন্সি। ইডির চার্জশিটে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দফায় এসডি কনসালটেন্সির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস-এর অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ৯৫ লাখ ১ হাজার টাকা সেই অ্যাকাউন্টেই জমা পড়ে বলে সূত্রের খবর।