হাওড়ার বুথে ভোটের কাজে লাগানো হল সিভিক ভলান্টিয়ারদের, আদলতের নির্দেশ অমান্য

রাজীব মুখোপাধ্যায়

হাওড়া: ‘রাজ্যে আইনের শাসন নেই, শাসকের আইন চলছে’- এই অভিযোগ বিভিন্ন ইস্যুতে শাসক দলের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। ™ঞ্চায়েত নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করা হবে না সিভিক ভলেন্টিয়ারদের। নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের সেই নির্দেশকে মান্যতা দেওয়ার কথাও জানিয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী সিভিক ভলেন্টিয়ার শুধুমাত্র পুলিশকে সহযোগিতা করবে, এভাবেই বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার, পুলিশ কমিশনার এবং বিভিন্ন জেলার জেলাশাসকদের জানান হয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দপ্তর থেকে।
শুধু তাই নয় সিভিক ভলেন্টিয়ার কে কীভাবে ব্যবহার করা হবে, তার জন্য ইতিমধ্যেই স্পষ্ট নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছিল। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
যদিও হাওড়া জেলার সদর ও উলুবেড়িয়া মহকুমার সংখ্যাগরিষ্ঠ বুথেই দেখা মিলল না কেন্দ্রীয় বাহিনীর। সেখানে পুরাতন প্রথা মতই ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের দায়িত্ব সামলালো পুলিশের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সিভিক ভলান্টিয়ার। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের লাইন ঠিক রাখা থেকে শুরু করে পরিচয় পত্র খুঁটিয়ে দেখা সবটাই সারলো সিভিক ভলেন্টিয়ারের দল। কিছু ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের বুথের ভিতরেও দেখা মিলল এই ভলেন্টিয়ারদের। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে আদালতের নির্দেশিকা, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকাতে সিভিকদের ব্যবহার না করার নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও এদের কেন ব্যবহার করা হচ্ছে। সকাল ৭ টা থেকে বিকেল ৩ টে পর্যন্ত কোনও ভোটগ্রহণ কেন্দ্রেই দেখা মেলেনি কেন্দ্রীয় বাহিনীর।
যদিও বেলা ১১ টা নাগাদ জগদীশপুরের কাছে জাতীয় সড়কে দেখা মিলেছিল বাহিনীর গাড়ির। যদিও বাহিনীর কোনও সদস্যই গাড়ি থেকে নেমে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করে নি বলেও সূত্রের খবর। যদিও সকাল থেকে বেলা গড়াবার পরেই হাওড়ার একাধিক ভোট গ্রহণ কেন্দ্র থেকেই অবাধে ছাপ্পা ও বুথ দখলের অভিযোগ উঠতে শুরু করে।
হাওড়ার অঙ্কুরহাটি প্রাথমিক ßুñলে মহীহারি -২ পঞ্চায়েত এলাকার ১,২,৩,৪,১০,১১ নম্বর বুথ সহ গোটা কেন্দ্রই শাসক দলের লোকেদের হাতে দখল হয়ে যাওয়ায় অভিযোগ ওঠে।
একইভাবে সলপ ৬৯ নম্বর বুথ থেকে সমস্ত নির্বাচনী এজেন্টদের তাড়িয়ে দিয়ে জানলা দরজা বন্ধ করে তৃণমূল ভোট লুট করছে বলেও অভিযোগ তোলে বিরোধীরা।
পাশাপাশি চামড়াইল, খালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালযয়ের ১৭০ নম্বর বুথ দখল করে ভেতরে অবাধে ছাপ্পা দেওয়ায় অভিযোগ বিরোধীদের।
মহিয়ারী অঞ্চলের মণিহারপুর প্রাইমারি স্কুলে ১৪২ নম্বর বুথ দখলের অভিযোগ ওঠে।
জগৎবল্লভপুর, শঙ্করহাটি অঞ্চল, বল্লববাটি প্রাইমারি ßুñল ও চিন্তামণি গার্লস হাই স্কুল, বুথ নম্বর ১৩৯/১৪০/১৪১ , এখানে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী মেশিন নিয়ে বুথ দখল করে নিয়েছে।
সাঁকরাইল ব্লকের নলপুর পঞ্চায়েতএলাকার ২৭২ নম্বর বুথ দাঁতপুর প্রাথমিক স্কুলে তৃণমূলের গুন্ডারা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘোরা এবং নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ। ওই সমস্ত বুথের এজেন্ট এর বার করে দেওয়া হয়েছে।
সারদা নন্দ এফ পি ßুñল আনন্দনগর, চকপাড়া বুথ ২২২,২২৩,২২৫, নম্বর বুথে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী বুথ দখল করার অভিযোগ ওঠে।
আনন্দনগর এলাকার সারদা নন্দ এফ পি স্কুল , চকপাড়া বুথ ২২২,২২৩,২২৫ নম্বর বুথে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী সম্পূর্ণরূপে বুথ দখল করে ছাপ্পা চালানোর অভিযোগ।
বালি ঘোষপাড়া, বুথ নম্বর ৩১০,৩১১, সাপুইপড়া প্রাইমারি স্কুলের বুথ দখল হওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এছাড়াও জগৎবল্লভপুরের যাদববাটি প্রাইমারি স্কুলে মাজু অঞ্চলে বুথ নম্বর ২৭৪,২৭৫ স্থানীয় তৃণমূল নেতা বাবলু মন্ডলের নেতৃত্বে বুথ দখল এবং বুথের সামনে বড় জমায়েতের অভিযোগ তোলে বিরোধীরা।
জগৎবল্লভপুর শঙ্করহাটি -১ নম্বর অঞ্চলে ব্রাক্ষণ পাড়া ১৪৭ নম্বর বুথে সময়ের পূর্বেই ব্যালট বাক্স সিল করে দেওয়া হয়।
মানিকপুর তথ্য কেন্দ্র থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বের রোশনি মহল অঙ্গনওয়াড়ি স্কুলে ভোট কেন্দ্রের ২৩৪ নম্বর বুথ। প্রার্থী সোনম বেগম শেখকে মারধরের অভিযোগ শাসক দলের বিরুদ্ধে। মানিকপুর মধ্যম পাড়ার ঘটনা।
একাধিক অভিযোগের মধ্যেও হাওড়ার ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হচ্ছে বলেই দাবি করেন জেলা সদর যুব তৃণমূলের সভাপতি কৈলাশ মিশ্র। তিনি বলেন, ‘ শান্তিভাবে গণ ভোট হচ্ছে, মানুষ ভোট দিচ্ছে। কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএম মানুষ থেকে জন বিচ্ছিন্ন বলেই এই সব কথা বলছে। জগৎবল্লভপুর এলাকাতে জগৎবল্লভপুর-১ এলাকাতে চকদা গ্রামের একটি বুথে বিজেপি কর্মীদের তোলা মিথ্যা অভিযোগে জগৎবল্লভপুরণমূলের নির্বাচনী এজেন্টকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। যদিও অঞ্চলগুলো এখনও শান্ত আছে। হেরে যাওয়ার ভয়ে আগে থেকেই এরা অজুহাত দেখাচ্ছে। বিশাল ভোট হচ্ছে।’
যদিও তৃণমূল নেতাকে অসংবেদনশীল আখ্যা দিয়ে বিজেপির রাজ্য সম্পাদক উমেশ রাই বলেন, ‘মমতা বন্দোপাধ্যায় মহাভারতের ধৃতরাষ্ট্র ও নির্বাচন কমিশনার গান্ধারী হয়ে গেছে। যে রাজ্যে সকাল ৭ টা থেকে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে একজন অসংবেদনশীল ব্যক্তিই বলতে পারে অবাধ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। আর কত জনের মৃত্যু হলে এরা অশান্তির কথা স্বীকার করবে। রাজ্যে ৩৫৫ ধারা লাগু করার দাবি জানাচ্ছি।’
অভিযোগ ও দাবির টানাপোড়েনের মধ্যে আদালতের নির্দেশ ও রাজ্য জুড়ে অশান্তির আবহাওয়াতে ফের আদালতে কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে রাজ্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। ইতিমধ্যেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করার আবেদন জানালেন কৌস্তভ বাগচী। ইমেল করে কলকাতা উচ্চ আদালতের মুখ্য বিচারপতিকে আবেদন জানান তিনি। আদালতে সব তথ্য প্রমান পেশ হওয়ার পর আদালতের তরফ থেকে কি জানান হয় তার দিকেই তাকিয়ে আছে রাজ্য রাজনৈতিক মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − 8 =