কেন্দ্র সরকারের আর্থিক বঞ্চনার কথা জনসমক্ষে তুলে ধরে নির্বাচনী প্রচার চালালেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মৌসম নুর। সোমবার তুমুল বৃষ্টির মধ্যে হাতে ছাতা নিয়ে রতুয়া ২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচার চালান সাংসদ মৌসম নুর। বৃষ্টির মধ্যে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কেন্দ্র সরকারের ১০০ দিন কাজ প্রকল্প এবং আবাস যোজনায় দীর্ঘদিন ধরে টাকা আটকে রেখেছে, সে কথা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরেন তৃণমূল সাংসদ মৌসম নুর। এদিন রতুয়া ২ ব্লকের পুখুরিয়া, আড়াইডাঙা, পরাণপুর, পীরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়েই প্রচার চালান তৃণমূল সাংসদ। সেই প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষেরা সাংসদের কাছে জানতে চান কবে ১০০ দিনের বকেয়া টাকা মিলবে। আবাস যোজনার ঘর তারা কিভাবে পাবেন।
সেই প্রসঙ্গ সামনে আসতেই সাংসদ মৌসুম নুর বলেন, দীর্ঘ দুই বছর ধরে কেন্দ্রের মোদি সরকার টাকা আটকে রেখেছে। রাজ্যকে এইসব প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে না। তারই বিরুদ্ধে সকলকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পাশাপাশি এদিন ওইসব এলাকায় সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেন যে তাঁরা লক্ষ্মী ভাণ্ডার পাচ্ছেন কিনা। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা পেয়েছেন কিনা। তৃণমূল সাংসদদের এই প্রশ্নের উত্তরে এক বাক্যেই ওইসব এলাকার বাসিন্দারা স্বীকার করেন যে তারা রাজ্য সরকারের সমস্ত রকম প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন।
একইভাবে এদিন রতুয়া দুই ব্লকের ওইসব এলাকাতে বিজেপি, কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে নির্বাচনের প্রচার চালান স্থানীয় দলীয় নেতৃত্ব।
রতুয়া ২ ব্লকের অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে তৃণমূলের দখলে। রতুয়া বিধানসভা কেন্দ্রের আসনটিও রয়েছে তৃণমূলের। চাঁচল মহকুমার এই ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি অত্যন্ত দুর্গম। আর সেই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে এদিন সকাল থেকেই বৃষ্টি মধ্যেই মনোনীত তৃণমূল প্রার্থীদের সমর্থনে নির্বাচনী প্রচার চালান সাংসদ মৌসম নুর।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মৌসুম নুর বলেন, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রামবাংলায় গিয়ে মানুষের মুখে ১০০ দিন কাজ প্রকল্পের বকেয়া টাকা না মেলার কথা শুনতে হয়েছে। বহু মানুষ আবাস যোজনার ঘর পাননি। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষের কাছে কেন্দ্র সরকারের আর্থিক বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছি। তৃণমূল সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কিভাবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এইসব প্রকল্পের সুবিধা না দিয়ে সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলছে সে কোথাও গ্রামবাসীদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। অথচ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সমস্ত প্রকল্পের সুবিধা গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষেরা পাচ্ছেন। সে কথাও এদিনের নির্বাচনী প্রচারের মধ্যেই একবাক্যে স্বীকার করেছেন বিভিন্ন এলাকারই গ্রামবাসীরা।
সাংসদ মৌসম নুর আরও বলেন, দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে এদিন যেখানেই গেছি সেখানেই মূলত মহিলাদের মুখে লক্ষ্মী ভাণ্ডারের সুবিধার কথা শুনতে পেয়েছি। এমন কোনও মানুষ নেই যারা তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন সুবিধাগুলি পান নি। বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, স্বাস্থ্যসাথী সমস্ত প্রকল্পের সুযোগ সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন। অথচ সাধারণ মানুষের জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কোনও উন্নয়নই করতে পারেনি। শুধু ভোটের মুখে ওদেরকে দেখা যায়। আর ভোট পেরোলেই বিরোধীদলের কোনও নেতাদেরই এলাকায় দেখা যায় না। আমরা সারা বছরই মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। আসলে বিরোধীদের কাছে নির্বাচনী প্রচারে কোনও ইস্যু নেই। তাই ওরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এদিনের রতুয়ায় নির্বাচনী প্রচারে মানুষের খুব ভালো সাড়া মিলেছে।
যদিও এ প্রসঙ্গে উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, ভোট পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের সুবিধার কথা মানুষের কাছে বলা হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা অনেকেই পাননি। তাছাড়াও যেভাবে বিভিন্ন পঞ্চায়েতগুলিতে দুর্নীতি হয়েছে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন সাধারণ গ্রামবাসীরা। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট বাক্সে এর প্রভাব পড়বে।