রাজ্য রাজনীতির আসরে সাধারণ মানুষের মন জয় করার পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘খেলা হবে, মমতা ব্যানার্জির প্লাস্টার করা পায়ের ছবি বা হাওয়াই চটি ’ নিয়ে যতই বিদ্রুপ, ব্যাঙ্গ বিজেপি লাগাতার করতে থাকুক না কেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যের ব্যবসায়ীরা, কিন্তু এই রাজ্যে তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার ধরার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের এই স্লোগান ও সিম্বলিক ছবিগুলিকেই মূল হাতিয়ার করেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের বাজারে সম্প্রতি, রায়গঞ্জ শহর, তার আশপাশের এলাকা তথা সমগ্র উত্তরবঙ্গ জুড়েই মধ্যপ্রদেশের কয়েকটি কোম্পানির তৈরি করা ‘খেলা হবে’ লজেন্স বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা তৈরি করেছে। কোম্পানির বক্তব্য, এই রাজ্যে ‘খেলা হবে’ স্লোগান, প্লাস্টার করা পা ও হাওয়াই চটি নিয়ে সাম্প্রতিককালে বিপুল চর্চা লক্ষ্য করেই তারা তাদের এই প্রোডাক্টের নাম ও প্যাকেটিংয়ের নকশা বদলে ফেলেছেন এবং তার এফেক্টও পাওয়া যাচ্ছে হাতেনাতে। রায়গঞ্জ শহরের বাজারের স্টেশিনারি দোকানগুলিতে সম্প্রতি ‘খেলা হবে’ লজেন্সের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। শহরের সেন্ট্রাল মার্কেটের এক হোলসেলারের দোকানে গিয়ে দেখা গেল, সকাল থেকেই এই ‘খেলা হবে’ লজেন্স প্যাকেট প্যাকেট বিক্রি হতে শুরু করেছে। প্যাকেটের উপর বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজিতে ‘খেলা হবে’ ক্যাপশন লেখা। তার নীচেই নীল পাড়ের সাদা শাড়ি পরা এক মহিলার পায়ের ছবি। ছবিতে ডান পায়ে প্লাস্টার করা। প্লাস্টার করা পায়ের নীচে একটি ফুটবল। বাম পায়ে নীল স্ট্র্যাপের হাওয়াই চটি পরা। দোকানের মালিক পরিমল দে জানিয়েছেন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই এই লজেন্সের বিক্রি শুরু হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হতেই এর চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারপর্বে শাসকদলের সভা, সমিতি কোথাও থাকলেই সেই এলাকার খুচরা বিক্রেতারা এই লজেন্স বেশি পরিমাণে অর্ডার করছে। শাসকদলের থিমের সঙ্গে এই লজেন্সের প্রচুর মিল থাকায় সভা, সমিতিতে আসা সমর্থকেরা এই লজেন্স বেশি পরিমাণে কেনে। জেলায় কোথাও শাসক দলের কোনো প্রোগ্রামের আগাম খবর পেলে আমরা এই লজেন্স সেই এলাকার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে আগে থেকেই বেশি করে পাঠিয়ে দেই। পঞ্চায়েত নির্বাচন মে/ জুন মাসে হতে পারে ধরে নিয়ে আমরা এই ‘খেলা হবে’ লজেন্স স্টক করতে শুরু করে দিয়েছিলাম।
এই লজেন্সের উত্তরবঙ্গের সিএনএফ শিলিগুড়ির ব্যবসায়ী উমেশ আগরওয়ালা জানিয়েছেন, মালদা থেকে কোচবিহার পর্যন্ত এই ‘খেলা হবে’ লজেন্স ব্যাপকভাবে বিক্রি হয়। মধ্যপ্রদেশের কয়েকটি কোম্পানি এই একই ক্যাপশন ব্যবহার করে লজেন্স তৈরি করছে সাম্প্রতিককালে। এদের থেকেই আমরা মাল আনি।
মধ্যপ্রদেশের এক কনফেকশনারির মালিক বান্টি বাদলানি টেলিফোনে জানিয়েছেন, আমরা এই লজেন্স অন্য নাম দিয়ে বিগত ৭/৮ বছর ধরে বিক্রি করে আসছি। গত বছরের শুরুতে কলকাতার কয়েকজন ব্যবসায়ীর থেকে অর্ডার নিয়েও আমরা সময়মতো সেই পরিমাণ মাল ডেলিভারি করতে পারিনি। তারা সেই সময় আমাকে ফোন করে মাঝে মাঝেই বলতো – আপনি আমাদের সঙ্গে খেলা করছেন। বাংলা ভালো না জানার কারণে আমি ‘খেলা করছেন’ শধের অর্থ বুঝতে পারিনি। কিন্তু ‘খেলা করছেন শধটা আমাকে খুব স্ট্রাইক করে। শধটা আমার খুব পছন্দ হয়। তাদের থেকে এর অর্থ জানার সময় কলকাতার ব্যবসায়ীরাই জানায়, সেখানে ওই শধ নিয়েই ব্যাপকভাবে চর্চা চলছে। ™রিস্থিতি বিচার করেই আমরা আমাদের চালু একটি প্রোডাক্টের নাম পালটে ‘খেলা হবে’ রাখি। প্রাক নির্বাচনের ঘটনা মাথায় রেখে লজেন্সের প্যাকেটের ডিজাইন করি। ওই প্রোডাক্ট পশ্চিমবঙ্গে খুব ভালো ব্যবসা দিচ্ছে আমাদের।
শাসকদলের জেলাস্তরের এক নেতা জানিয়েছেন, আমাদের দলের নির্বাচনের মূল শক্তি দিদির ছবি। বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্লাস্টার করা পা নিয়ে দিদি প্রচার করে বিরোধীদের খেলা দেখিয়েছেন। তার ওই প্লাস্টার করা পায়ের ছবি সিম্বল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে প্রোডাক্ট বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদেরকেও তার সাহায্য নিতে হচ্ছে। বিভিন্ন প্রচারসভায় এই লজেন্স সমর্থকদের মধ্যে বিলি করা হচ্ছে দেখছি।