৮ই জুলাই পঞ্চায়েত ভোট। ভোটের দামামা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই শাসক ও বিরোধী দল জোর কদমে ভোট প্রচার শুরু করে দিয়েছে। ভোট প্রচারে রাজনৈতিক দলগুলি দেওয়াল লিখন শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু হুগলির আরামবাগ মহকুমা জুড়ে প্রচারে আগের মতো দেওয়ালজুড়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ ভরা কার্টুন ছড়া দেখা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ ভোটের সময় দেওয়াল প্রচারের রঙ্গ তামাসা দেখে মেতে উঠতেন। ডিজিটাল ফ্লেক্সের যুগে বদলে যাচ্ছে প্রচারের ধরন। রাজনৈতিক দলগুলোর সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারে এবার দেওয়াল লিখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে এবার ভোট প্রচারের প্রধান হাতিয়ার। জনসভা, কর্মিসভা থেকে প্রার্থীদের এলাকায় এলাকায় প্রচার মুহূর্ত মধ্যে পোস্ট হয়ে যাচ্ছে। শাসক দল এলাকার উন্নয়নের ছবি যেমন প্রচার করছেন। বিরোধীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের পেজে প্রচারে তার পাল্টা প্রচার করছেন। এমনকী প্রার্থী হতে না পারা রাজনৈতিক দলের বিক্ষুব্ধরাও নিজেদের ক্ষোভের কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন। রিসেন্ড করা সেই পোস্ট নেট পাড়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। মুহূর্তের মধ্যে যা নিয়ে সরগরম হয়ে উঠছে এলাকা। ডিজিটাল যুগের ভোট প্রচারে দেওয়াল লিখন এবার কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতারাই সে কথা মানছেন।
আরামবাগ ব্লক তৃণমূলের এক জাফর উদ্দিন বলেন, একসময় বিরোধী দলকে ঘায়েল করার জন্য প্রচারের অন্যতম অস্ত্র ছিল দেওয়াল লিখন। ভোটের সময় ছড়া কার্টুন ভোরে উঠত দেওয়াল। দুই তিন বছর আগেও তৃণমূলের দেওয়াল লিখন মানুষের মুখে মুখে ফিরত। যেমন, পদ্মফুল শুকিয়ে গেছে, মরচে ধরা কাস্তে, তৃণমূলকে ভোট দিয়ে মানুষ চাইছে বাঁচতে। আবার, ‘ ঝকঝকে রাস্তা, ঝলমলে আলো, জনগণ বলছে তৃণমূল ভালো।’ এবার সময় খুব কম। দক্ষ দেওয়াল লিখন শিল্পীদের পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে অল্প সময়ে ডিজিটাল ফ্লেক্সে ব্যানার তৈরি হয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই আধুনিক প্রযুক্তিকে আমরা বেশি ব্যবহার করছি। তবে প্রচারে দেওয়াল লিখন যে হচ্ছে না তা নয়। আরামবাগে সিপিএমের ২ নম্বর এরিয়া কমিটির সদস্য শান্তিমোহন সরকার বলেন, সময়ের সঙ্গে ভোট প্রচারে বদল আসছে। দেওয়াল বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। এবার প্রার্থীর নাম প্রতীক চিহ্ন আঁকা হচ্ছে। আগেকার মতো ছড়া লেখা ও কার্টুন আঁকার প্রবণতা কমেছে। প্রচারের বেশিরভাগটাই এবার সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। গোঘাটের কুমুড়শা অঞ্চলের বিজেপি প্রার্থী রাজু রানা জানান, এবার হাতে বেশি সময় নেই। তাই দেওয়াল লিখনে জোর দিতে পারিনি। এলাকায় এলাকায় যেখানে প্রচার করছি তার ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছি। সেই প্রচার একবারে বহু মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়ছে। তবে স্বীকার করতেই হবে দেওয়াল লিখন ঘিরে প্রচারে যে রসবোধটা থাকত সেটা হারিয়ে যাচ্ছে। পুরশুড়ার বিজেপি বিধায়ক বিমান ঘোষ বলেন, অল্প সময়ে এখন ফেস্টুন ও ব্যানার তৈরি করা যাচ্ছে। দেওয়াল লিখন সময় সাপেক্ষ এবং খরচও বেশি। বাস্তবতার কারণেই প্রচারে আমাদের বদল আনা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারে জোর দেওয়া হচ্ছে। আরামবাগের মানিকপাঠের বাসিন্দা অঙ্কন শিল্পী সঞ্জয় মল্লিক বলেন, ভোট এলেই দেওয়াল লিখনের জন্য ডাক পেতাম। এই কাজেও যথেষ্ট দক্ষতা দরকার। এবার দেওয়াল লিখছি তবে আগের মতো চাহিদা নেই। দেওয়াল লিখন ঘিরে যে রাজনৈতিক তরজার ঝড় উঠতো তা স্থিমিত হয়ে আসছে। সবমিলিয়ে ভোটের প্রচারে দেওয়াল লিখনে গুরুত্ব থাকলেও ডিজিটাল যুগে তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে।