অতি সম্প্রতি কবিগুরুর নিজের হাতে লেখা একটি দুর্লভ চিঠি নিলামে তোলা হয়। প্রত্যাশার দর থেকে প্রায় সাতগুণ বেশি দামে বিক্রি হল সেই চিঠি। তাঁর সৃষ্টি যে অমর তা বোধহয় নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। আর এরই দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল অনলাইনের এই আর্ট অকশন।
প্রসঙ্গত, ২১-২২ জুন অনলাইনে একটি ‘আর্ট অকশন’ ছিল। সেই ‘আর্ট অকশন’-এ কবিগুরুর হাতে লেখা সেই চিঠি নিলামে ওঠে। চিঠিতে নিজের ছোট গল্পগুলির ইংরাজি অনুবাদের বিষয়ে কথা লিখতে দেখা গেছে কবিগুরুকে। ইংরাজি অনুবাদগুলি তাঁর যে পছন্দ হচ্ছে না সেই কথাই তুলে ধরেন এই চিঠিতে। নিলামে তোলার আগে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল চিঠিটির সর্বোচ্চ দাম উঠতে পারে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। সবাইকে চমকে দিয়ে সেই দর ওঠে ২১ লাখ ১২ হাজার ২১২ টাকা।
সূত্রে খবর, এই চিঠি ১৯৩০ সালের ৩ জানুয়ারি লেখা। কবিগুরু লিখেছিলেন সত্যভূষণ সেনকে। চিঠিতে ছোট গল্পগুলির ইংরাজি অনুবাদের বিরোধিতা করেছেন রবীন্দ্রনাথ। চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, তাঁর কাছে প্রমাণ রয়েছে ইংরাজি সাহিত্যের পাঠকরা তাঁর ছোট গল্পের অনুবাদ একেবারেই পছন্দ করছেন না। কারণ অনুবাদের লেখনশৈলির সঙ্গে সেই সময়কার ইংরাজি সাহিত্যিকদের লেখনশৈলির কোনও মিল নেই।
কবিগুরুর এই চিঠি বিস্তর দামে নিলাম হওয়ায় খুশি অস্তগুরু অকশন হাউসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সানি চন্দিরামণি। তাঁর কথায়, ‘কবিগুরুর হাতে লেখা এই চিঠি অতি দুর্লভ। এর আগেও আমরা কবিগুরুর বেশ কিছু হাতে আঁকা ছবি, কবিতা, লেখা চিঠি নিলামে ওঠাতে পেরে খুশি। এই চিঠিতে কবিগুরুর সাহিত্যি চেতনার পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। আর সেখানেই এই চিঠির সার্থকতা।’
চিঠিটির বিষয় নজর কেড়েছে রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ও অনুবাদকারীদেরও। এই বিষয়ে শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার জানিয়েছেন, ‘রবীন্দ্রনাথের কিছু ছোট গল্প সিস্টার নিবেদিতা অনুবাদ করেছিলেন। ১৯১২ সালে তিনি রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্প ‘কাবুলিওয়ালা’-র ইংরাজি অনুবাদ করেন। সেই অনুবাদ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ কখনও আপত্তি তোলেননি। হয়তো এক্ষেত্রে সত্যভূষণ সেনের অনুবাদ রবীন্দ্রনাথের খুব একটা পছন্দ ছিল না। তাই হয়তো তিনি এই চিঠিটি লিখেছিলেন সত্যভূষণকে।’ অন্যদিকে, নিলামে ওঠে নন্দলাল বসুর আঁকা একটি ছবিও। সেটির প্রত্যাশা দর ধরা হয়েছিল ১৫-২০ লাখ টাকা। প্রত্যাশা দর ছাপিয়ে সেটি বিক্রি হয় ৬৪ লাখ ৭৮ হাজার ৫২৫ টাকায়। ১৯৪১ সালে নন্দলাল বসু এঁকেছিলেন ছবিটি। তাঁর কল্পনায় উঠে এসেছে কৃষ্ণর মাখন চুরি ও যশোদা মায়ের ছবি।