শনিবার সকাল থেকে রাজ্য পুলিশের রুটমার্চ ভাঙড়ে

পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ভাঙড়। দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়িয়েছিল শাসক-বিরোধীর সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে। গুলি-বোমা নিয়ে দাপিয়ে বেরিয়েছে দুষ্কৃতীরা। রক্ত ঝরেছে। প্রাণহানি হয়েছে। গত কয়েকদিন এটাই ছিল ভাঙড়ের চিত্র। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল, যে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে ছুটে যেতে হয়েছিল ভাঙড়ে। অশান্তি কবলিত এলাকা ঘুরে দেখেছেন তিনি। তারপর থেকে একটু একটু করে ছন্দে ফেরার চেষ্টায় ভাঙড়। শনিবার সকাল থেকে ভাঙড়ে শুরু হয় পুলিশের রুটমার্চ। ‘এরিয়া ডমিনেশন’-এ পুলিশ সুপার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে নামেন রাজ্য পুলিশের কর্মী এবং আধিকারিকেরা।সঙ্গে চলে ঘন ঘন মাইকিং।ভাঙড়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাতেই এই পদক্ষেপ করা হয় পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে। এদিকে শনিবার সকাল থেকে ভাঙড় বিডিও অফিসের আশপাশের চত্বর বিশেষ করে কাঠালিয়া চৌমাথা, কাঠালিয়া মোড়, কাঠালিয়া বাসস্ট্যান্ড, বিজয়গড় বাজার চত্বরে প্রচুর পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে সতর্ক নজরদারি চালান পুলিশকর্মীরা। সাধারণ মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশকর্মীরা। কারণ, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে একটানা সংঘর্ষের জেরে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন এলাকার বিস্তীর্ণ অংশের বাসিন্দারা। আতঙ্কে দোকান বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা চলে পুলিশের তরফে। আশ্বস্ত করা হয়, পুলিশ সবরকমভাবে নিরাপত্তা দিতে বদ্ধপরিকর।এদিকে শনিবার ছিল মনোনয়নের স্ক্রুটিনির দিন। মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনগুলিতে যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তার যাতে কোনওভাবেই পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করতে এদিন সকাল থেকে সজাগ ছিল পুলিশ প্রশাসন।
এদিকে বিডিও অফিসে ঢোকার মুখেও প্রচুর পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।যাঁরা স্ক্রুটিনির জন্য আসছেন, তাঁদের প্রত্যেকের কাগজ-পত্র যাচাই করে তবেই ঢুকতে দেওয়া হয়। অবাঞ্ছিত কাউকে বিডিও অফিসের ভিতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ড্রোন দিয়েও চলছে নজরদারি। সবমিলিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে আজ সকাল থেকে পুলিশি ব্যবস্থাপনা চোখে পড়ার মতো।
তবে এদিনের রাজ্য পুলিশের কড়াকড়ি দেখে একাংশের ধারনা, এরকম ব্যবস্থা যদি মনোনয়ন জমার দিনগুলিতেও থাকত, তাহলে হয়ত এই হানাহানি, রক্তারক্তি হত না। এক ভাঙড়বাসী বলছেন, ‘পুলিশের এই সক্রিয়তা যদি আগে দেখা যেত, তাহলে এই মৃত্যুগুলি ভাঙড়বাসীকে দেখতে হত না।মানুষ মারা যাওয়ার পর পুলিশ সক্রিয় হয়, রাজ্যপাল সক্রিয় হন, সরকার সক্রিয় হয়, নির্বাচন কমিশন সক্রিয় হয়। এটা তো আগে থেকে হওয়া দরকার ছিল। ২০১৮ সালে যা ঘটেছে, সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আগে থেকে সচেতন হওয়া দরকার ছিল।’ সঙ্গে এ প্রশ্নও ওঠে, ‘যেখানে মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ হওয়ার কথা, সেই প্রক্রিয়া যদি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়, তাহলে ভোটে লড়ার অর্থ কী?’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 2 =