রাজভবন থেকে রাজ্যপালের হয়ে মামলায় লড়ার নির্দেশ আসতে ঘোর সমস্যায় রেজিস্ট্রাররা

১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারদের অবস্থা এখন শাঁখের করাতের মতোই। কোন কূল তারা রাখবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না। এই মুহূর্তে যে অবস্থার মধ্যে তাঁরা তাতে তাঁদের আশঙ্কা একূল-ও কূল দুকূল-ই না যায়। কারণ, রাজ্যের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য-রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের নিয়োগ করা উপাচার্যের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বেতন ও ভাতা না দেওয়ার নির্দেশ রেজিস্ট্রারদের কাছে পাঠানো হয়েছিল শিক্ষা দপ্তর থেকে। এবার আদালতে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলায় আচার্যের হয়ে লড়াইয়ের জন্য রাজভবনের নির্দেশ পাঠানো হল এই ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারদেরই কাছে।
এই প্রসঙ্গে রাজ্যের একাধিক প্রাক্তন ভিসি জানান, এই টানাপড়েনে অস্থায়ী উপাচার্যদের চাকরি-জীবন নিয়ে টানাটানি শুরু হতে পারে। বিশেষত, যে অধ্যাপকরা নিজের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লিয়েনে অন্যত্র উপাচার্য হিসেবে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের সঙ্কট বেশি। সরকার নিজের অবস্থানে অনড় থাকলে এঁদের ‘ব্রেক ইন সার্ভিস’-এরও আশঙ্কা থাকছে। কারণ, বেতনের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে রাজ্য সরকারের বিবেচনাধীন। কারণ, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের বিশেষ কমিশনার সোমবার রেজিস্ট্রারদের যে নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন, তাতে বেতন ও ভাতার পাশাপাশি ‘অন্যান্য বিষয়’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে তা মোটেই স্পষ্ট নয়।
এদিকে কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, রেজিস্ট্রাররা উচ্চশিক্ষা দপ্তরের ওই চিঠি পেয়ে নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত ভিসিদের কাছে তা পাঠিয়েছেন। কলকাতায় শিক্ষক, আধিকারিক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন দেখভাল করেন সহ উপাচার্য (অর্থ) এবং যাদবপুরে ফিনান্স অফিসার। যদিও প্রাক্তন উপাচার্যদের অনেকেরই বক্তব্য, ভিসিদের কাছে নির্দেশিকা পাঠিয়ে দায় সারতে পারেন না রেজিস্ট্রাররা।
এদিকে বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে রাজভবন থেকে আচার্যের সচিবালয় থেকে আসা চিঠি নিয়েও। কারণ, তাঁরা তো শুধু শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশই পাননি, এদিকে আবার মামলায় লড়ার জন্য চিঠি এসেছে রাজভবন থেকেও। ফলে বিড়ম্বনায় পড়েছেন রেজিস্ট্রাররা। তাঁদের বক্তব্য, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে কিছু জানা নেই তাঁদের। অথচ রাজভবন সব দায় তাঁদের ঘাড়ে ঠেলে দিচ্ছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে অবশ্য রেজিস্ট্রারদেরও পার্টি করা হয়েছে ওই মামলায়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলো টানাপড়েন নিয়ে সরব। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সনাতন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘টানাপড়েনের জেরে শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা এই লড়াই থেকে শিক্ষার মুক্তি চাই।’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের কথায়, ‘আচার্যের উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন।তারই মধ্যে উপাচার্যদের বেতন বন্ধের নির্দেশে আমরা স্তম্ভিত। এঁরা আবেদনকারী ছিলেন না। সরকার-আচার্যের টানাপড়েনে এমন পদক্ষেপ শিক্ষক সমাজের অপমান। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × two =