দময়ন্তীর বদলিকে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না শাসক বিরোধী শিবির

ফের বদলি করা হল আইপিএস দময়ন্তী সেনকে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পদে ছিলেন দময়ন্তী সেন। সম্প্রতি কালিয়াগঞ্জ ধর্ষণ মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট যাঁদের ওপর তদন্তভার ন্যস্ত করেছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম এই দময়ন্তী সেন। প্রসঙ্গত, এক কিশোরীকে ধর্ষণ খুনের অভিযোগে সম্প্রতি উত্তাল হয় কালিয়াগঞ্জ। সেই মামলায় সিট গঠন করে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা নির্দেশ দেন, আদালতের নজরদারিতে হবে তদন্ত। সেই বিশেষ তদন্তকারী দলে রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত, আইপিএস দময়ন্তী সেন ও প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। এর আগেও একাধিক ধর্ষণের মামলায় তাঁর নেতৃত্বে সিট গঠন করা হয়েছে। ২০১৮ সালে কাকদ্বীপে দম্পতিকে পুড়িয়ে মারার ঘটনাতেও সিট গঠনের নির্দেশ দেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। প্রসঙ্গত, পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডের তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এবারও একাধিক ধর্ষণ ও রাজনৈতিক খুনের হাইপ্রোফাইল মামলায় যেভাবে দময়ন্তীকে হাইকোর্ট বাড়তি দায়িত্ব দিয়েছে, তা শাসকদলের জন্য অস্বস্তিকর বলে মনে করছেন বিরোধীরা। আর তাই ফের কম গুরুত্বপূর্ণ পদে দময়ন্তীর বদলি হয়ে থাকতে পারে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
তবে ২০১২ সালে পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ কাণ্ডের পর কলকাতা পুলিশ থেকে বদলি করে দেওয়া হয় তাঁকে। এরপরই তাঁকে কলকাতা পুলিশ থেকে সরিয়ে ব্যারাকপুরের পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের ডিআইজি পদে বদলি করা হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ সাতবছর পর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ফের কলকাতা পুলিশে ফেরানো হয়। কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (৩) পদে আনা হয় তাঁকে। সেই বদলির আগে তিনি ছিলেন রাজ্য পুলিশের আইজি (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) পদে। এবার ফের কলকাতার বাইরে পাঠানো হল দময়ন্তীকে।এবার কলকাতা পুলিশ থেকে সরিয়ে তাঁকে দেওয়া হচ্ছে ‘এডিজি ট্রেনিং’ পদ। মঙ্গলবারই আসে এই বদলির নির্দেশ। মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়, কলকাতার পুলিশের স্পেশাল কমিশনার (২) পদ থেকে অন্যত্র পাঠানো হচ্ছে দময়ন্তী সেনকে। রাজ্য পুলিশের এডিজি (প্রশিক্ষণ) পদে নিয়োগ করা হচ্ছে তাঁকে।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে পার্ক স্ট্রিটে গণধর্ষণের যে ঘটনা ঘটেছিল তার তদন্তের আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, এটা ধর্ষণের ঘটনা নয়। এমনকী কলকাতা পুলিশের তৎকালীন নগরপাল আরকে পচনন্দা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছিলেন এটি ধর্ষণ বা গণধর্ষণের ঘটনা নয়। তবে দময়ন্তী সেন তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যান। সেই ঘটনায় যেভাবে কম সময়ের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। তখন থেকেই সংবাদ শিরোনামে চলে আসেন এই আইপিএস অফিসার। এরপরই তড়িঘড়ি দময়ন্তী সেনকে কলকাতা পুলিশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখানে আরও একটা কথা বলতেই হয়, লালবাজারের প্রথম মহিলা গোয়েন্দা প্রধান হয়েছিলেন দময়ন্তী সেন। তবে পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে সাফল্য আসার পরও তাঁর বদলি হয়েছিল ব্যারাকপুরে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে। পরে সেখান থেকে দার্জিলিংয়ে ডিআইজি রেঞ্জে বদলি করা হয় তাঁকে। সেখান থেকে সিআইডি-র ডিআইজি পদে নিযুক্ত হন তিনি। এরপর ২০১৯ সালে ফের কলকাতা পুলিশে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল তাঁকে। তবে এই দফায় কলকাতা পুলিশে চার বছর কাটতে না টাকতেই ফের কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি করা হল তাঁকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − ten =