কালিয়াগঞ্জ ব্লকের রাধিকাপুর এলাকার চাদগা গ্রামে পুলিশের গুলিতে মৃত মৃত্যুঞ্জয় বর্মনের বাড়িতে এদিন দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়ে সিআইডির তদন্তকারী দলের সদস্যরা। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের বুঝিয়ে তারপর মৃত্যুঞ্জয় বর্মনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সিআইডি আধিকারিকরা। ঘটনার তদন্তে ‘ভুয়ো সাক্ষী’ নিযুক্ত করেছে বলে সিআইডির বিরুদ্ধে এলাকার বাসিন্দা ও মৃতের পরিবার অভিযোগ করেছে। ২১ এপ্রিল কালিয়াগঞ্জের সাহেবঘাটায় দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তাকে ধর্ষণ করে খুন করার অভিযোগে ওঠে। ২৫ এপ্রিল বিজেপির পক্ষ থেকে এই ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় সাংসদের নেতৃত্বে পুলিশ সুপারের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। পাশাপাশি রাজবংশী ও আদিবাসী সংগঠনের পক্ষ থেকে এই একই ইস্যুতে কালিয়াগঞ্জ থানা অভিযানের ডাক দেওয়া হয়। কালিয়াগঞ্জ থানা অভিযানকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ বাঁধে। গোটা কালিয়াগঞ্জ শহর কার্যত রণক্ষেত্রের আকার নেয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে আক্রমণ করার পাশাপাশি কালিয়াগঞ্জ থানায় ঢুকে তাণ্ডব চালায়। পুলিশের একাধিক গাড়ি ভাঙচুর করার পাশাপাশি থানার একাধিক গাড়ি ও বিল্ডিংয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করতে ২৬ এপ্রিল গভীর রাতে কালিয়াগঞ্জ ব্লকের রাধিকাপুর এলাকার চাদগা গ্রামে বুধবার গভীর রাতে পুলিশ তল্লাশি অভিযান করতে গিয়ে মৃত্যুঞ্জয় বর্মন (৩৩) নামে এক যুবককে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি জানালেও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে সিআইডি টিম এলাকায় গিয়ে তদন্ত শুরু করে।
এদিন দুপুরে সিআইডি অফিসার অনীশ সরকারের নেতৃত্বে সিআইডি’ র একটি টিম চাদগা গ্রামে যায়। গ্রামে ঢোকার মুখেই এলাকার বাসিন্দারা তাদের ঘিরে ক্ষোভ দেখাতে থাকে। তাদের অভিযোগ, ঘটনার সাক্ষী হিসেবে এমন কয়েকজনকে রাখা হয়েছে, যারা আদৌ এলাকায় বসবাসই করে না। ফলে আদৌ এই তদন্ত নিরপেক্ষ হচ্ছে না বলে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন। সিআইডি আধিকারিকরা ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের বুঝিয়ে তারপর মৃত্যুঞ্জয় বর্মনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে। গুলিতে মৃত মৃত্যুঞ্জয় বর্মনের বাবা রবীন্দ্রনাথ বর্মন জানিয়েছেন, আমার চোখের সামনে পুলিশ গুলি চালিয়ে আমার ছেলেকে খুন করেছে। আমরা সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছি। সিআইডি তদন্ত শুরু করেছে। এরা তো রাজ্য সরকারের অধীনে। প্রথম থেকেই এদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আমাদের সন্দেহ ছিল। এরা তদন্তে নেমে এলাকায় বসবাস করে না, ঘটনার দিন সাখানে আদৌ উপস্থিত ছিল না- এমন কয়েকজনকে সাক্ষী করে। ফলে মিথ্যা সাক্ষীর বয়ানের ভিত্তিতে কি তদন্ত হবে তা বোঝাই যাচ্ছে। এই বিষয় নিয়েই আমার আপত্তি আছে। এলাকার বাসিন্দারা এই ব্যাপারেই এদিন ক্ষোভ প্রকাশ করে।
এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য (বিজেপি) তথা মৃত মৃত্যুঞ্জয় বর্মনের দাদা বিষ্ণু বর্মন জানিয়েছেন, সিআইডি তদন্তে আমাদের প্রথম থেকেই ভরসা ছিল না। কিন্তু আমরা তাদের সহযোগিতা করেছি। এরপর জানতে পারি তারা এই ঘটনায় বেশ কয়েকটি ফলস সাক্ষী বানিয়েছে। এলাকার কালীপদ বর্মন নামে এক ব্যক্তিকে তারা সাক্ষী বানিয়েছে। সে এই গ্রামের বাসিন্দা হলেও বিগত কয়েক বছর ধরে ৪ কিলোমিটার দূরে রাধিকাপুর গ্রামে থাকে। রতন রাজবংশী নামে এক সাক্ষী দিল্লিতে কাজ করে। ঘটনার ৩ দিন পর সে এলাকায় আসে। তাকে সাক্ষী করা হয়েছে। এলাকার কৃষ্ণ বর্মন নামে এক যুবক ঘটনার ২ সপ্তাহ আগে পা ভেঙে বিছানায় শয্যাশায়ী। সে একা বিছানা থেকে নামতেও পারে না, তাকেও ঘটনার সাক্ষী করা হয়েছে। এসব ঘটনা কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যদের জানানো হয়েছে। সিআইডির এই পক্ষপাতিত্বর জন্যই এলাকার বাসিন্দারা তাদের ক্ষোভ দেখিয়েছেন।
সিআইডি আধিকারিক অনীশ সরকার জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে। তা শেষ হলেই রিপোর্ট পেশ করা হবে।