কলকাতা পুলিশের মানবিক মুখ দেখল তিলোত্তমাবাসী, ঘুড়ির মাঞ্জায় মারাত্মক জখম ‘জোম্যাটো বয়’, চাকরি বাঁচাতে অর্ডার পৌঁছল পুলিশ

ফের কলকাতা পুলিশের মানবিক মুখ দেখলেন তিলোত্তমাবাসী।শহরে প্রতিদিন এমন ঘটনাও ঘটে যেখানে জনগণের সেবায় নিজের দায়িত্ব সীমার বাইরে গিয়েও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন পুলিশ কর্মীরা। তবে তা সাধারণত থেকে যায় লোকচক্ষুর অন্তরালে।তবে বর্তমানে শহরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যাদের হাতে তাদের এই সব মহতী কাজ নেটিজেনদের কল্যাণে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে মাঝে মধ্যেই। তেমনই জনৈক এক মহৎ পুলিশ কর্মীর অবদান ফেসবুকে তুলে ধরলেন এক নেটিজেন। বিপদে পড়া এক ফুড অ্যাপ ডেলিভারি বয়ের চাকরি বাঁচাতে এগিয়ে এলেন পুলিশ কর্মী স্বয়ং।
সম্প্রতি বেলঘড়িয়ায় সঠিক সময়ে খাবার ডেলিভারি দেওয়ার লক্ষ্যে তীব্র গতিতে বাইক চালিয়ে গ্রাহকের অর্ডার পৌঁছতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে জোম্যাটো ডেলিভারি বয়। রাস্তায় থাকা চিনা মাঞ্জা সুতো দেখতে না পেয়ে বাইক চালিয়ে যাওয়ার সময় সেই সুতো গলায় লেগে যায়। সুতোর ধারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় গলা। যন্ত্রণায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট করে বসেন ওই যুবক। এদিকে দুর্ঘটনার সময় ওই জায়গার কাছেই ডিউটিতে ছিলেন কয়েকজন পুলিশ কনস্টেবল ও সিভিক ভলান্টিয়ার। বাইক অ্যাক্সিডেন্টের তীব্র শব্দে তাঁরা ছুটে আসেন এবং সাংঘাতিক আহত ওই যুবককে উদ্ধার করেন। তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। মাঞ্জার আঘাত সহ বাইক অ্যাক্সিডেন্টে মারাত্মক জখম হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় জোম্যাটোর সেই কর্মীকে। এদিকে হাসপাতালে ভর্তির কথা শুনে পুলিশকর্মীদের কাছে কাকুতি মিনুতি করতে থাকেন ওই কর্মী। শরীরে জখম আঘাতের যন্ত্রণা ভুলে তাঁর তখন একটিই চিন্তা খাবার ডেলিভারি। হাসপাতালে কর্মরত এক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, যন্ত্রণা সত্ত্বেও ওই আহত যুবক পুলিশ কর্মী ও চিকিৎসকদের প্রাথমিক চিকিৎসা করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার কাতর আর্তি জানান। এরপরই ওই যুবক এও জানান,ফুড অ্যাপ সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী সময় মতো ডেলিভারি না পৌঁছলে তাঁর চাকরি যেতে পারে। নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাওয়া তিনি হয়ত তাঁর কমিশন আর পাবেন না বলেও জানান। তবে খাবারটি পৌঁছে দিতে পারলে তাঁর চাকরিটুকু বেঁচে যাবে বলে কাকুতি-মিনতি করতে থাকেন ওই যুবক।
এদিকে আহত ওই যুবকের সেসময় হাসপাতালের বেড থেকেও ওঠার ক্ষমতা ছিল না। তবে ঘটনার গুরুত্ব উলব্ধি করতে পারেন হাসপাতালে উপস্থিত এক পুলিশকর্মী। এরপর তিনি যুবককে আশ্বস্ত করে তাঁর থেকে গ্রাহকের ঠিকানা নিয়ে সঠিক ঠিকানায় খাবারটি পৌঁছেও দেন। শুধু তাই নয়, পরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করিয়ে যুবককে বাড়িও পৌঁছে দেন তিনি। আহত যুবকের চাকরি বাঁচাতে পুলিশকর্মীর এই মহানুভবতা মন ছুঁয়েছে নেটিজেনদের। কিন্তু আহত যুবককের মতো ওই পুলিশ কর্মীর পরিচয়ও অজানাই রয়ে গিয়েছে।
পুলিশ কর্মীর প্রশংসার সঙ্গে সঙ্গে এই ঘটনায় অনলাইন ফুড অ্যাপ সংস্থাগুলির পলিসি নিয়েও সমালোচনার ঝড় ওঠেছে নেটপাড়ায়। মৃত্যুর মুখোমুখি হলেও টাইমে দিতে হবে ডেলিভারি। সামান্য কমিশনের জন্য দ্রুত বাইক চালানোয় এমন কত দুর্ঘটনা ঘটছে তাঁর হিসাব নেই। সেই নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন নেটনাগরিকেরা। একইসঙ্গে চলছে সেই মহানুভব পুলিশ কর্মীর পরিচয় খোঁজার কাজও। সিস্টেমে থাকা গুটিকয়েক দুর্নীতিগ্রস্থ উর্দিধারীদের কলঙ্ক মুছে অনুপ্রেরণা এই সিংহভাগ সৎ পুলিশকর্মীরাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × three =