মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক কৃতীদের সংবর্ধনা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার ছাত্র-ছাত্রী সব জায়গায় সফল। আইসিএসই, সিবিএসই থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে বাংলার ছেলে-মেয়েরা আলোয় ভরিয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার মিলনমেলা প্রাঙ্গণে এই ভাষাতেই কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবক-অভিভাবিকা এবং স্কুলগুলিকেও অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী। শুধু মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক নয় আইসিএসসি ও সিবিসির কৃতী ও সকল শিক্ষকদের অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী।এদিনের অনুষ্ঠানের শুরুতেই দেখা যায় কৃতীদের সঙ্গে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কথা বলতে। জানতে চান কার কী লক্ষ্য ভবিষ্যতে তা নিয়েও।
এরই পাশাপাশি এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে বাংলার পড়ুয়ারা যাতে পিছিয়ে না যায় তার জন্যই চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতিতে চার বছরের ডিগ্রি কোর্স চালু হচ্ছে রাজ্যে। এদিকে স্নাতকোত্তর এবার থেকে এক বছররের কোর্স।জাতীয় শিক্ষানীতি চালু প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, যদি অন্যান্য রাজ্য এটা চালু করে এবং আমরা না করি, তাহলে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা পিছিয়ে যাবে।পাশাপশি চলতি বছর থেকে স্নাতক স্তরে জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, এবছর থেকে পাস কোর্সে স্নাতক করলে তিনবছর এবং অনার্স করলে চার বছর লাগবে। এটা কেন্দ্র থেকে নিয়ম করেছে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন আশ্বাস দেন, আর্থিক সমস্যা যাতে ভবিষ্যেতের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় তার জন্য পড়ুয়াদের পাশে রয়েছে রাজ্য। উচ্চ শিক্ষা থেকে যাতে কেউ বঞ্চিত না হয় তার জন্য সকল পড়ুয়াদের জন্য স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের রয়েছে, আর তাতেই রাজ্য সরকার গ্যারান্টার। সঙ্গে এও জানান, ‘যাঁরা টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারছেন না বলে আমাকে চিঠি দিয়েছেন, তাঁদের চিন্তার কোনও কারণ নেই। টাকার জন্য পড়াশোনার সমস্যা হবে না। আমি কোনও কাজ ফেলে রাখা পছন্দ করি না। যাঁরা আমাকে চিঠি দিয়েছেন, সেগুলি সব আমি দেখে নিয়েছি। আগামী দিনে বিশ্ববাংলার গৌরব, বিশ্বের গৌরব হয়ে উঠবে বাংলার ছাত্রছাত্রীরা।’
এরই রেশ ধরে শিক্ষা দপ্তরে একটি লেটার বক্স করার নির্দেশ শিক্ষামন্ত্রীকে। বলে্ন, আমাদের ‘কন্যাশ্রী’, ‘ঐক্যশ্রী’, ‘শিক্ষাশ্রী’ রয়েছে। তারপরেও যদি উচ্চশিক্ষায় যেতে টাকার প্রয়োজন হয় তাহলে ওই লেটার বক্সে আবেদন ফেলে দেবে। সেটা দেখে অবিলম্বে তাঁকে জানাতে হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, কেউ যেন বঞ্চিত না হয়। একইসঙ্গে এদিন সংবর্ধনা মঞ্চ থেকে ‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড মোবাইল অ্যাপ’, ‘এডুকেশন ইকো-সিস্টেম পোর্টাল’ এবং ‘দ্য জেমস অব বেঙ্গল’ নামে একটি বইয়েরও উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বক্তব্য রাখার সময় ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কখনও নিজেকে দুর্বল ভাববে না। হতাশা জীবনের শত্রু। সবসময় মনে করবে, আমি পারব। মনে রাখবেন, আপনি হারবার জন্য পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেননি, জেতার জন্য জন্মগ্রহণ করেছেন। সঙ্গে এও বলেন, মাত্র দু-বছর হল আইএএস, আইপিএস কোর্স চালু করেছি। ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ সার্ভিস, ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস কোর্সও চালু হয়েছে। সমস্ত ভাষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ছোটবেলায় কোনও সুযোগ-সুবিধা পাইনি। তাই এখন যারা ছোটো তাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করি। সেজন্য নবম শ্রেণি থেকে সাইকেল, ট্যাব দেওয়া হয়। এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে ফের তুলে ধরেন গরমের ছুটির কথা। জানান, প্রচণ্ড গরমের জন্য স্কুলের ছুটি আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হল। ৫ ও ৭ তারিখের বদলে ১৫ জুন স্কুল খুলবে। তবে এ আশ্বাসও দেন, কারও পড়াশোনায় অসুবিধা হবে না।