১২ ঘণ্টা ধরে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে গ্রেপ্তার করে ইডি। বিরোধীদের মতে, নিয়োগকাণ্ডে কালীঘাটের কাকু অর্থাৎ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাক্তন কর্মী সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের এই গ্রেপ্তারি নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে অন্যতম বড় ডেভেলপমেন্ট। পাশাপাশি তাঁদের এও ধারনা, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের থেকেও ‘বিগ ক্যাচ’ ইডি-র কাছে এই ‘কালীঘাটের কাকু’। কারণ, পার্থ চট্টোপাধ্যায় পর থেকে শাসকদলের সঙ্গে যোগ সূত্র রয়েছে এমন এবং শাসকদলের একাধিক নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন ঠিকই কিন্তু তাঁদের কারও সঙ্গে সরাসরি শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রমাণিত যোগসূত্র এখনও মেলেনি। কিন্তু বিরোধীদের মতে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কারণ, এক সময়ে তৃণমূল সাংসদের অধীনে কাজ করতেন এই কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ।তা তিনি নিজে মুখেই স্বীকারও করেছেন। তাঁর সেই কথা সূত্র ধরেই এমন দাবি বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
উল্লেখ্য, একটি বেসরকারি সংস্থার সিইও পদে কাজ করতেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। সেই সংস্থায় একসময় ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আগে সংস্থার পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। তবে শুভেন্দু অধিকারীর টুইটে তুলে ধরা তথ্য অনুযায়ী সে সংস্থায় ডিরেক্টর হিসেবে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের একাধিক সদস্যের নাম রয়েছে। তবে এটাই শেষ নয়, সুজকৃষ্ণ বাবুর নামে একাধিক বেসরকারি সংস্থা রয়েছে। এমনকী নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীয়ের প্রোমোটারি ব্যবসায় এই সুজয়কৃষ্ণর অংশীদারিত্ব রয়েছে বলে জানা গিয়েছে ইডি-র তরফে। আর এখানেই ইডি দাবি, আয় বহির্ভূত বিপুল সম্পদের মালিক সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। অনুমান, তিনি বেআইনি পথে এই সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে কালো টাকা সাদা করতেন।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে প্রথম থেকে কোথাও ছিল না সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের নাম। আচমকা মাস চারেক আগেই নিয়োগকাণ্ডে নাম সামনে আসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাক্তন এই কর্মীর নাম। ততদিনে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বিএড কলেজের সঙ্গে যুক্ত মানিক ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল, বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ ও শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের জালে ধরা পড়েছেন।তখনই নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্তে নাম উঠে আসা গোপাল দলপতির মুখে প্রথম শোনা যায় এই কালীঘাটের কাকু তথা সুজয়কৃষ্ণর নাম। গোপাল দলপতি স্পষ্টই জানিয়েছিলেন, কালীঘাটের একজন আছেন য়িনি এই চাকরি বিক্রির টাকা লেনদেন নিয়ে অনেক কিছু জানেন।
এরপরই চলতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথমবার তাপস মণ্ডলের মুখে শোনা যায় কালীঘাটের কাকুর নাম। তিনিই জানান, কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। পরে আদালতের পথে কুন্তল ঘোষের মুখেও শোনা যায় এইকালীঘাটের কাকু-র নাম। এরপরই তদন্তকারীদের তদন্তে নাম ওঠে তাঁর। তলব করা হয় সিবিআই-এর তরফ থেকে। এদিকে তাঁর বিভিন্ন বাড়ি ও সংস্থায় তল্লাশি চালানো হয় ইডি-র তরফ থেকে। এদিকে মঙ্গলবার কিছু প্রশ্নের উত্তরের জন্যই তলব করা হয় ইডি দপ্তরে। তবে তদন্তে সহযোগিতা করেননি সুজয়কৃষ্ণ এমনটাই দাবি ইডি-র আধিকারিকদের। কারণতথ্য প্রমাণ দেখানোর পরও তা অস্বীকার করেন তিনি। এরপরইতদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ইডি।
এদিকে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের গ্রেপ্তারির পর দিলীপ ঘোষ থেকে শুভেন্দু অধিকারীর গলায় এক সুর। তাঁরা মনে করেছেন দুর্নীতির মাথার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন তদন্তকারীরা। বাম নেতা ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন বলেন, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ডদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তাই নিয়োগ দুর্নীতির মূল মাথাদের বিরুদ্ধে এবার তথ্য মিলবে বলে দাবি রাজনৈতিক ময়দানে।