সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য সচিব

রোগী রেফার থেকে শুরু করে সরকারি হাসপাতালের চিকিত্‍সা পরিষেবার নানা ঘটনায় বারবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরকে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গেল স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে। আর এই বৈঠকে একদিকে সরকারি হাসপাতালগুলিকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করার পাশাপাশি পরিষেবার মানোন্নয়ন নিয়ে তৈরি ব্লু-প্রিন্টও তৈরি করলেন স্বাস্থ্য সচিব।
আর এই বৈঠকে প্রশ্ন স্বাস্থ্য সচিবের নিশানায় ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজও। কারণ, দুপুরের পরে সিনিয়র চিকিৎসকদের দেখা মেলে না। রাতে গরহাজির হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপাররা। কেন এমনটা ঘটছে তা নিয়েও প্রশ্ন করেন স্বাস্থ্য সচিব। এরই পাশাপাশি রেডিওথেরাপিতে ১৬ কোটির যন্ত্র চাওয়ায় ভর্ৎসনাও করা হয়েছে বলে খবর। যা যন্ত্র আছে তা দিনে কতবার ব্যবহার হয় তা নিয়েও ওঠে প্রশ্ন। আর এখানেই তুলনা করা হয় বেসরকারি হাসপাতালের পরিষেবার সঙ্গে। কারণ, এই একই যন্ত্রে বেসরকারি হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়া গেলেও সরকারি হাসপাতালে তা ব্যবহার করা হয় মাত্র ৩-৪ ঘণ্টা। শুধু ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজই নয়, প্রশ্ন ওঠে নীলরতনের ভূমিকাতেও। নীলরতন সরকারে যক্ষ্মা রোগীর জন্য সিসিইউ বেড অমিল। পর্যাপ্ত লোক থাকার পরও কেন নোংরা ওয়ার্ড, হাসপাতাল চত্বর তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন স্বাস্থ্যসচিব। সূত্রের খবর, মেডিক্যালের পড়ুয়া বিক্ষোভ থেকে চিকিত্‍সা পরিষেবা বৈঠকে উঠে আসে সমস্ত কিছুই। শুধু তাই নয়, এই বৈঠকে এসএসকেএম অধিকর্তাকেও প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করেন স্বাস্থ্য সচিব। জানতে চান, এসএসকেএম-এ একটাও দালাল নেই তাঁরা তা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারবেন কি না তা নিয়েও। প্রশ্ন তোলা হয়, রাতে আধিকারিকদের না দেখা মেলার ইস্যু থেকে জানতে চাওয়া হয় স্বাস্থ্য ভবনের বদলি নির্দেশিকা মেনে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের ছাড়া হয় কি না বা রোগীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার হয় না কেন তা নিয়েও।
শুধু চিকিত্‍সা পরিষেবাই নয়, হাসপাতালের রেফার রোগ নিয়েও পাশাপাশি সরকারের কড়া মনোভাবের কথাও জানান, স্বাস্থ্য সচিব। কারণ, পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও কেন রেফার করা হচ্ছে তা নিয়েও এই বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, কাঠগড়ায় তোলা হয় ডাক্তারি পড়াশোনার মানও। কারণ, একজন রোগীর শিরা খুঁজতে চারবার সূচ ফোটাতে হচ্ছে। আর এই সূত্র ধরেই প্রশ্ন ওঠে, মেডিক্যাল কলেজগুলিতে তবে কী পড়ানো হচ্ছে উঠে তা নিয়েও। এরইমধ্যে মেডিক্যাল কলেজের ওপর রোগী চাপের কথা বৈঠকে তুলে ধরেন অধ্যক্ষ, এমএসভিপি-রা। পাল্টা জেলা মহকুমা হাসপাতাল কেন রেফার রোগের শিকার, সেই প্রশ্নও করেন স্বাস্থ্য সচিব।
আর এই ঘটনা সামনে আসতেই অনেকেরই ধারনা, মদন মিত্রের বিস্ফোরক মন্তব্যের পরই নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। কারণ, কিছুদিন আগেই এসএসকেএমে রোগী ভর্তিতে দালাল রাজের অভিযোগ করেছিলেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক। এই ঘটনার পর সপ্তাহখানেক যেতে না যেতেই শহরের সবকটি মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে বৈঠক করতে দেখা যায় স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − five =