অভিষেক মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখল শীর্ষ আদালত

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে কলকাতা হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিল তা বহাল রাখল শীর্ষ আদালত। তবে ২৫ লক্ষ টাকা জরিমানার যে নির্দেশ হাইকোর্ট দিয়েছে, তাতে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। ফলে শুক্রবার শীর্ষ আদালতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলার শুনানিতে অভিষেকের অস্বস্তি রয়েই গেল। এদিন শীর্ষ আদালতের তরফ থেকে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারকেরা জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পারবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অর্থাৎ, অভিষেককে দেওয়া হল না কোনও রক্ষাকবচ। পাশাপাশি এও জানান, তদন্ত যেমন চলছে চলবে, এমনটাও নির্দেশ শীর্ষ আদালতের।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কুন্তল ঘোষের একটি চিঠি ঘিরে নাম উঠে এসেছে তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই মামলারই শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি জেকে মাহেশ্বরী ও বিচারপতি পিএস নরসিমার বেঞ্চে। এদিকে হাইকোর্টের এই নির্দেশের বিরোধিতা করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন অভিষেক। তবে শুক্রবার সেই মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখে শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্ট। তবে ২৫ লক্ষ টাকা জরিমানার যে নির্দেশ হাইকোর্ট দিয়েছে, তাতে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে নোটিস জারি করে সবপক্ষের জবাব তলব করা হয়। আগামী ১০ জুলাই ফের এই মামলার শুনানি।
আদালত সূত্রে খবর, সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে এদিন অভিষেকের মামলার শুনানি ছিল। বিচারপতি জেকে মাহেশ্বরী ও বিচারপতি পিএস নরসিমার বেঞ্চে শুনানি হয়। কলকাতা হাইকোর্টের মতোই তদন্তে হস্তক্ষেপ করবে না সুপ্রিম কোর্ট, বলে জানিয়ে দেয় বেঞ্চ। এদিন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী জানান, শিক্ষাক্ষেত্রে বিশাল দুর্নীতি হয়েছে। উঠে আসে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, ৫০ কোটি টাকা উদ্ধারের কথাও। এদিন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে এই মামলায় সওয়াল করেন বর্ষীয়ান আইনজীবী অভিষেক মনুসিংভি।
প্রসঙ্গত, গত শনিবারই নিজাম প্যালেসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় অভিষেককে। সেখানে যাওয়ার আগেই অভিষেক জানিয়ে দেন, তিনি হাজিরা দিচ্ছেন ঠিকই। তবে একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছেন। সাড়ে ৯ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর নিজাম থেকে বেরিয়ে এসে অভিষেক জানান, ‘জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব আসলে ‘অশ্বডিম্ব’। কিছুই হয়নি।’
এরপর ২২ মে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে অভিষেকের আইনজীবী অভিষেক মনুসিংভি তাঁর মক্কেলের জন্য সুরক্ষাকবচের আর্জি জানান। যাতে ইডি-সিবিআই কড়া পদক্ষেপ করতে না পারে তার আর্জি জানান তিনি। পাশাপাশি অভিষেকের গ্রেপ্তারির আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। যদিও বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি সঞ্জয় কারোলের বেঞ্চ সেই আর্জি খারিজ করে দেয়। শুক্রবার অবকাশকালীন বেঞ্চেও বহাল রইল অভিষেকের অস্বস্তি। চাইলে আবারও ডাকতে পারে সিবিআই।
এ বিষয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা দিলীপ ঘোষ জানান, ‘কোর্টে গিয়ে মামলায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করা, সময় নষ্ট করা, সরকারি খরচ বাড়ানোর জন্যই কোর্ট জরিমানা করেছিলেন। আপাতত তা স্থগিত আছে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদ আটকানোর জন্য যে কোর্টে কোর্টে দৌড়ানো, সেটা বন্ধ হয়নি। যখন ইচ্ছা সিবিআই তাঁকে ডাকবেন, যেতে হবে, তথ্য দিতে হবে।’ এদিনের শীর্ষ আদালতের রায় প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘কেন উনি রক্ষাকবচ চাইছেন? বরং এখনও যারা ধরা পড়েছেন তাঁদের বড় অংশের সঙ্গে তো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি আছে, কারও সঙ্গে সম্পর্ক শোনা যাচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদটাই বড় কথা নয়। গভীরে যেতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − seven =