৩২ হাজার প্রশিক্ষণহীন প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচাপপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। একই সঙ্গে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে নির্দেশও দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। পর্ষদ এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায়। এরপরই ডিভিশন বেঞ্চ ৩২ হাজার নিয়োগ বাতিলের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিলেও নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর ক্ষেত্রে আগের রায়-ই বহাল রাখে।
৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষককে চাকরি পেতে বা ধরে রাখতে নতুন করতে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে, এই ইন্টারভিউ নিয়ে সরব হন আরাত্রিকা চক্রবর্তী নামে এক শিক্ষিকা। অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার ওয়েস্ট বেঙ্গল নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে এই পোস্ট হওয়ার পরই তা ভাইরালও হয়। কারণ, ফেসবুক পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘ইন্টারভিউ আমরা কেন দেব? ৬ বছর চাকরি করলাম, এখন উপহাষ কেন?’ সমস্যা তৈরি হয়, ফেসবুক পোস্টে ‘উপহাস’-কে ‘উপহাষ’ লেখা হওয়ায়। সামান্য বাংলা বানান ভুলের কারণে ব্যাপক ট্রোলিংয়ের মুখে পড়তে হয় আরাত্রিকা চক্রবর্তীকে। কারও প্রশ্ন, ‘একজন প্রাথমিক শিক্ষক যদি এমন সামান্য বানান ভুল করেন, তবে ছাত্র-ছাত্রীদের কী শেখাবেন?’ কেউ আবার কটাক্ষের সুরের কমেন্ট করেছেন, ‘৬ বছর স্কুলে শিক্ষকতা করার পরও যে উপহাস বানান ভুল লেখে, তার ইন্টারভিউ কেন লিখিত পরীক্ষাতেও বসা উচিত।’
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। ২০১৬ সালে প্রাথমিকে নিয়োগ হওয়া ৩৬ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি রায় সংশোধনের আবেদন করেন। রায় সংশোধন করে ৩২ হাজার প্রশিক্ষণহীন প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। একই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয় চাকরি বাতিল হওয়ার পরও তাঁরা আগামী চারমাস স্কুলে যেতে পারবেন এবং প্যারা টিচারের বেতন কাঠামো অনুযায়ী তাদের বেতন দেওয়া হবে। আদালত জানিয়ে দেয়, ৩ মাসের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাপর্ষদকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে এবং চাকরিহীন প্রার্থীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকলে আবেদন করতে পারবেন।
এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের যাওয়ার ইঙ্গিত দেন পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল। এরপরই ডিভিশন বেঞ্চের শরনাপন্ন হন তাঁরা। বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ ৩২ হাজার প্রশিক্ষণহীন প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের উপর স্থগিতাদেশ জারি করা হলেও নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার উপর কোনও স্থগিতাদেশ জারি করা হয়নি। আগামী সেপ্টেম্বরে পরবর্তী শুনানি হওয়া অবধি নিয়োগ বাতিলের উপর স্থগিতাদেশ জারি থাকবে বলেই জানায় আদালত।