বুধবার, ২৪ মে বেলা ১২টায় সাংবাদিক বৈঠক করে ফল ঘোষণা করল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৫৭ দিনের মাথায় হল ২০২৩এ-র ফল ঘোষণা। বুধবার উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বিদ্যাসাগর ভবনের রবীন্দ্রমিলন মঞ্চ থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে ফল প্রকাশ করেন সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। সংসদ সভাপতি জানান, এবার পাশের হার ৮৯.২৫ শতাংশ। ৫২৮০০ জন পড়ুয়া মোট ৮০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছেন। প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৩৮ শতাংশ পড়ুয়া। এবছর পরীক্ষা দিয়েছেন মোট আট লাখ ৫২ হাজার পরীক্ষার্থী। পরীক্ষায় দেন ৮ লাখ ২৪ হাজার ৮৯১ জন। পাশ করেছেন ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৮০৭ জন। পাশের হার ৮৯.২৫ শতাংশ। এর মধ্যে ৯১.৮৬ শতাংশ ছাত্র পাশ করেছেন। ছাত্রীদের পাশের হার ৮৭.২৬ শতাংশ। তবে পরিসংখ্যান বলছে,মাধ্যমিকের থেকে প্রায় দেড় লক্ষ পরীক্ষার্থী বেশি উচ্চ মাধ্যমিকে। আর সেখানে ছাত্রদের তুলনায় ১ লাখ ২৭ হাজার বেশি ছাত্রী পরীক্ষা দেন। এদিকে মাধ্যমিকের পর উচ্চমাধ্যমিকেও পাশের হারে শীর্ষে পূর্ব মেদিনীপুর। পূর্ব মেদিনীপুরে পাশের হার ৯৫.৭৫ শতাংশ। পাশের হারে দশম স্থানে কলকাতা। কলকাতায় পাশের হার ৯০ শতাংশের বেশি। সার্বিক বিচারে মাধ্যমিকের মতোই উচ্চমাধ্যমিকেও জেলার জয় জয়কার। পাশের হারে বিচারে ফের কলকাতাকে টেক্কা দিয়েছে জেলার স্কুলগুলো। পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়াও এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে ১০ টি জেলায় পাশের হার ৯০ শতাংশ পেরিয়ে গেছে।
তবে সংসদ সভাপতি এও জানান, এদিন ফল ঘোষণা হলেও হাতে মার্কশিট পারবে না পরীক্ষার্থীরা। তার জন্য ৩১ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে তাদের। পাশাপাশি এও বলেন, একইসঙ্গে ফলাফল জানার জন্য স্কুলে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। অনলাইনে বা এসএমএসের মাধ্যমেই ফলাফল জানা যাবে। প্রাপ্ত নম্বরও জানতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা। ফল জানা যাবে wbresults.nic.in ওয়েবসাইটে। এছাড়া WBCHSE Results 2023 মোবাইল অ্যাপেও জানা যাবে ফল। বেলা সাড়ে ১২ টা থেকেই ওয়েবসাইটে দেখা যাবে ফল। এদিনের ফল প্রকাশ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সংসদ সভাপতি। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকেও। সুশৃঙ্খল ভাবে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পরীক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। সফল পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েও।
এদিন ফল প্রকাশ করার সময় সংসদ সভাপতি এও জানান, এবছর প্রথমবার মার্কশিট ও সার্টিফিকেটে থাকছে কিউ আর কোড। সেই কোডের মধ্যেই থাকছে পরীক্ষার্থীদের একাধিক তথ্য। অর্থাৎ কোড স্ক্যান করলেই সহজেই বেরিয়ে আসবে তথ্যগুলি। কোডের মধ্যে থাকছে, পরীক্ষার্থীর নাম, রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, ইন্সটিটিউশন কোড, মোট প্রাপ্ত নম্বর ও গ্রেড। বর্তমানে সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি ব্যবহার বেড়েছে। কাগজের নথির ব্যবহারও কমছে ক্রমশ। সে কারণেই এই উদ্যোগ সংসদের। পড়ুয়ার কাছে সবসময় নথি না থাকলেও কোড দিলেই তথ্য় বেরিয়ে আসবে। ফলে পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে সুবিধা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এবার প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ পরীক্ষার্থীর জীবনের দ্বিতীয় বড় পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল উচ্চ মাধ্যমিক। কিন্তু এরা কোভিড আবহের কারণে মাধ্যমিক দেননি। তাই এদের প্রথম বড় পরীক্ষাই উচ্চ মাধ্যমিক। পাশাপাশি সংসদ সভাপতি এদিন এও জানিয়ে দেন পরের বছর অর্থাৎ ২০২৪-এ উচ্চমাধ্যমিক শুরু হবে ১৬ ফেব্রুয়ারি। শেষ হবে ২৯ ফেব্রুয়ারি।
২০২৩-এর উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম ১০ জনের মধ্যে রয়েছে ৮৭ জন পরীক্ষার্থী। হুগলি জেলা থেকে সবচেয়ে বেশি। প্রথম হয়েছেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের শুভ্রাংশু সর্দার। প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৬। যুগ্মভাবে দ্বিতীয় হয়েছেন সুষমা খান ও আবু সানা। প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৫। তৃতীয় হয়েছেন চন্দ্রকেতু মাইতি (তমলুক), অনসূয়া সাহা (বালুরঘাট), পিয়ালি দাশ (আলিপুরদুয়ার), শ্রেয়া মল্লিক (বালুরঘাট)। প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৪। উচ্চমাধ্যমিকে চতুর্থ সৃজিতা বসাক, নরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রেরণা পাল। প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৩। উচ্চমাধ্যমিকে পঞ্চম হয়েছে কৌস্তুভ কুণ্ডু, ঋষিতা সিনহা মহাপাত্র, দীপ্তার্ঘ্য দাস, অঙ্কিতা ঘড়াই, অনন্যা সামন্ত। প্রাপ্ত নম্বর ৪৯২।