কেন্দ্রীয় সরকারের ৯ বর্ষপূর্তিতে ভবানীপুর এলাকায় মোদির কাজ তুলে ধরতে ৬ ভাষায় পুস্তিকা প্রকাশের নির্দেশ শুভেন্দুর

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এলাকা ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বুথ স্বশক্তিকরণ অভিযান সভা করা হয় বিজেপির তরফ থেকে। আর এই স্বশক্তিকরণ সভায় বিজেপি নেতা তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নির্দেশ দিয়েছেন ভবানীপুরে প্রধানমন্ত্রী মোদি যে কাজ করেছেন তা সামনে আনা হবে ছয়টি ভাষায়। আগামী ২৬ মে ৯ বছর পূর্ণ করবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। আর বিজেপি সরকারের এই ৯ বর্ষপূর্তিকে সামনে রেখে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রচার অভিযানও শুরু করতে চায় বঙ্গ বিজেপি। আর এবার বিজেপির লক্ষ্য এই প্রচারপর্বে দক্ষিণ কলকাতাতেও ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে নিজেদের মাটি শক্ত করার। কলকাতা সহ সমগ্র বঙ্গে বিজেপির রাজনৈতিক মাটি শক্ত করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতাদের তরফে তুলে দেওয়া হয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর হাতে। এরপরই বুথ স্বশক্তিকরণ অভিযান সভা বৈঠকে শুভেন্দু নির্দেশ দেন, ৬ ভাষায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাজের তথ্য সামনে এনে পুস্তিকা প্রকাশ করার। কারণ, ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে নানা ভাষাভাষী মানুষের বাস। কলকাতা পুরসভার মোট ৮টি ওয়ার্ড নিয়ে ভবানীপুর বিধানসভা। সেখানে যেমন বাঙালিদের বাস, তেমনই রয়েছেন পঞ্জাবি, বিহারি, গুজরাতিরাও। তাই আগামী লোকসভা নির্বাচনে মমতার কেন্দ্র থেকে যাতে সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন পাওয়া যায়, সেই কাজে এখন থেকেই নেমে পড়তে বলেছেন শুভেন্দু। তাই শুধু একটি ভাষাতে প্রচার-পুস্তিকা তৈরি করলে হবে না, যে সব ভাষাভাষী মানুষের বাস ভবানীপুরে, সেই সব ভাষায় প্রচার-পুস্তিকা পৌঁছে দিতে হবে তাঁদের কাছে। আর সেই কারণেই ৬টি ভাষায় পুস্তিকা প্রকাশ করা নির্দেশ দেন শুভেন্দু। এগুলি হল, বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, মৈথিলি, গুরমুখি ও গুজরাতি। এরই পাশাপাশি তিনি উদাহরণ হিসাবে তিনি ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের কথা উল্লেখ করেন। কারণ, ২০১৪-য় ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ১৭৮ ভোটে এগিয়ে গিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী তথাগত রায়। তাই ভবানীপুর মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্র বলে এখানে পদ্মফুল ফোটানো সম্ভব নয়, এমনটা মানতে রাজি নন শুভেন্দু। যদিও, ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে ভবানীপুর বিধানসভার উপনির্বাচনে মমতা ৫৬ হাজার ভোটে জিতেছিলেন।
ভবানীপুর কেন্দ্রের আরও এখটা বড় ফ্যাক্টর পাঞ্জাবি ভোটার। যাঁরা ফলাফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা নিতে পারেন। এদিকে শনিবার ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের এক পঞ্জাবি যুবক তথা ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কর্মী পবন সিং বিরোধী দলনেতাকে একটি কৃপাণ উপহার দেন। এরপরই বৈঠকে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শুভেন্দু বলেন, ‘শিখ সম্প্রদায়ের বড় অংশের সমর্থন ছিল বিজেপির দিকে। কিন্তু কৃষি বিল নিয়ে তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় সেই সমর্থন বিরূপ হয়েছিল। কৃষি বিল প্রত্যাহার হয়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে আবার সেই সমর্থন বিজেপির দিকে ফিরতে শুরু করেছে। যার ফলস্বরূপ অমরিন্দর সিংহের মতো নেতা বিজেপিতে যোগদান করেছেন। ভবানীপুরে প্রায় ১২-১৩ হাজার পঞ্জাবি ভোটার রয়েছেন। তাঁদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে আমাদের।’ এর পরেই ওই শিখ বিজেপি কর্মীকে ভবানীপুর বিধানসভায় তাঁদের সম্প্রদায়কে নিয়ে একটি রাজনৈতিক সম্মেলন করতে নির্দেশ দেন। সেই সম্মেলনে যে তিনি নিজেও উপস্থিত থাকবেন, তা-ও জানিয়ে দেন শুভেন্দু।
বিরোধী দলনেতার থেকে নির্দেশ পাওয়ার পরই নিজের সম্প্রদায়ের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলাও শুরু করেন বিজেপি কর্মী পবন। মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্র ভবানীপুর বিধানসভায় যে তাঁর কাজ মোটেই সহজ নয়, তা মেনে নিচ্ছেন তিনি। কারণ, ভবানীপুরের সিংহভাগ পঞ্জাবি ভোটারের সমর্থন রয়েছে তৃণমূলের দিকে। এই প্রসঙ্গে শিখ যুবক পবন সিং এও জানান,‘৩০ বছর আগে ভবানীপুরে শিখদের সমর্থন বামফ্রন্টের সঙ্গে ছিল। তার আগে সেই সমর্থন ছিল কংগ্রেসের দিকে। এখন তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি ও অপশাসন দেখে বহু মানুষ তৃণমূল থেকে বিমুখ হচ্ছেন। আর মানুষ তো পরিবর্তনশীল, তাই সেই সব মানুষের কাছে গিয়ে সরকারের দুর্নীতি এবং প্রশাসনের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে নিজেদের বিকল্প রাজনীতির কথা বললেই তাঁরা আমাদের গ্রহণ করতে পারেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 15 =