এগরা বিস্ফোরণ কাণ্ডে মৃত্যু হল আরও ২ জনের। শনিবার ভোর রাতে কলকাতার এক হাসপাতালে মৃত্যু হয় রবীন্দ্র মাইতির। এরপরবাজিকাণ্ডে শনিবার এসএসকেএমে চিকিৎসাধীন দ্বিতীয় রোগীরও মৃত্যু হয়। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ মৃত্যু হয় খাদিকুলের পিঙ্কি মাইতির। এর আগে শুক্রবার সকালেই এগরা বিস্ফোরণকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ভানু বাগের মৃত্যু হয়েছে। কটকের একটি হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে সূত্রে খবর।
তবে এগরার ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলেছে রাজ্যে। বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন রয়েছে এলাকায়। ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের রেশ এখনও কাটেনি। মূল অভিযুক্ত ভানু বাগ ওরফে কৃষ্ণপদর মৃত্যুর পর ছবি বদলে গিয়েছে অনেকটাই। সিআইডি সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তাঁর গোপন জবানবন্দি নেওয়ার চেষ্টা করেন সিআইডি আধিকারিকেরা। তবে ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া শরীরে মৃত্যুকালীন সম্পূর্ণ জবানবন্দি দিতে পারেননি ভানু। তবে চিকিৎসকদের উপস্থিতিতে কিছুটা জবানবন্দি রেকর্ড করা গিয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে।
এগরা বিস্ফোরণ কাণ্ডের পর ক্ষতবিক্ষত ছিলেন মূল অভিযুক্ত কৃষ্ণপদ ওরফে ভানু বাগও। কিন্তু, সে সব তোয়াক্কা না করেই ঘটনার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বাড়ি ছাড়েন তিনি। তখনও ভানু ছিলেন রক্তাক্ত। বেশিদূর যাওয়ার ক্ষমতা তাঁর ছিল না। সেটা বুঝেই সিআইডি আধিকারিকেরা আন্দাজ করেছিলেন, পালালেও, খুব বেশি দূরে যাননি অভিযুক্ত৷ শুরু হয় তল্লাশি।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে এই কারখানা চালাতেন তিনি। এর আগেও সেখানে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। ভানুর দাদা ও বৌদি মারাও যান সেই বিস্ফোরণে। তবে এবারের বিস্ফোরণের ভয়াবহতা অনেক বেশি। প্রাণহানিও অনেক। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় এনআইএ-র দাবি তুলেছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছিলেন, ‘এনআইএ তদন্ত করে বিচার হলে হোক, আমাদের আপত্তি নেই। তবে আসল ব্যক্তি যেন ধরা পড়েন।‘ বাজি কারখানার মালিকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। যদিও সেই মালিক ভানু বাগ শুক্রবারই মারা গিয়েছেন।
ইতিমধ্যে সিআইডি এই ঘটনার তদন্ত করছে। ঘটনার ভয়াবহতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাইকোর্টও। অন্যদিকে এগরা থানার আইসি মৌসম চক্রবর্তীকে সরিয়ে সেখানে আনা হয়েছে স্বপন গোস্বামীকে। এর আগেও এই থানায় কাজ করেছেন স্বপন গোস্বামী। এতদিন তিনি হুগলি গ্রামীণ পুলিশ জেলার সাইবার ক্রাইম থানায় আইসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এবার এগরা থানায়।
ফলে সব মিলিয়ে এগরার ভয়াবহ বিস্ফোরণ রাজ্য-রাজনীতির প্রধান চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। খাদিকুল গ্রামের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রী। তা নিয়ে উত্তেজনাও ছড়িয়েছে এলাকায়। একে একে ফরেন্সিক দল, বম্ব ডিসপোজাল দল এবং ডগ স্কোয়াড গিয়েছে। বিস্ফোরণের পর থেকে বাংলা রাজনীতির কার্যত ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে খাদিকুল গ্রাম।
অন্যদিকে এরইমধ্যে এগরার জামগাঁ গ্রামে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে উদ্ধার হল বিপুল বারুদ। স্থানীয় সূত্রে খবর, চৈতন্য মান্না নামে এক ব্যক্তি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বাজি বানাচ্ছিল। খাদিকুলে বিস্ফোরণের পর জামগাঁ গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে বিপুল পরিমানে অবৈধ বাজি মজুত করে রাখা হয়। এলাকাবাসীদের সন্দেহ হলে খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পুলিশ এসে বিপুল পরিমাণ বাজি ও বারুদ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।