২ হাজার টাকার নোট বাজার থেকে প্রত্যাহার করার কথা আরবিআই-এর তরফ থেকে সামনে আনার পরই সবারই স্মৃতিতে উস্কে দিয়েছে ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বরের নোটবন্দির কথা। যা আজও একটুও আবছা হয়ে যায়নি আমজনতার স্মৃতি থেকে। সেদিন রাতারাতি বাতিল হয়ে গিয়েছিল পুরনো ৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকার নোট। পুরনো নোট বদল করার জন্য ব্যাঙ্কগুলিতে লাইন লেগে গিয়েছিল। বাজারে এসেছিল নতুন ৫০০ টাকা ও ২০০০ টাকার নোট। সেই ঘটনার প্রায় সাত বছর পেরিয়ে ২০০০ টাকার নোটও প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তবে এবার ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে ২০০০ টাকার নোট ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে বদলে নেওয়ার জন্য। তবে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণার পরই শোরগোল পড়ে রাজনীতিতে।
কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সুর চড়ায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। প্রশ্ন ওঠে তাহলে কি ফের সাত বছর আগের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে সাধারণ মানুষকে কি না তা নিয়ে।
তবে এ বিষয়ে মুখ খুলতে দেখা গেল বিজেপি বিধায়ক তথা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়িকে। তিনি গোটা বিষয়টির বিশ্লেষণ করে, মানুষকে অযথা বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শই দেন। অশোকবাবুর মতে, ‘অনেকেই গেল গেল রব তুলছেন। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর যে নোটবন্দি হয়েছিল, তখন যে নগদ টাকার ঘাটতি তৈরি হয়েছিল, সেই একই পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে অনেকে বলছেন। এটি একান্ত অপপ্রচার এবং লোকজনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে।’
পাশাপাশি তিনি এও জানান, এমন বড় অঙ্কের নোট বাতিল শুধু ভারতেই নয়, অতীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, ২০১০ সালে কানাডায় নোট বাতিল, ২০১৪ সালে সিঙ্গাপুরে নোট বাতিল এবং ২০১৬ সালে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের কথাও তুলে ধরেন তিনি। অশোকবাবুর কথায়, ‘২০০০ টাকার নোট বা বড় বড় টাকার নোট থাকলে যারা দুর্নীতি করে, যারা ঘুষ নেয়, তাঁদের সুবিধা হয় মাত্র। সাধারণ মানুষের পকেটে ২০০০ টাকার নোট ক’টা থাকে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বরং যারা ঘুষ নেয়, তারা যদি ২০ কোটি টাকা বাড়িতে রাখতে চায়, তাতে ২০০০ টাকার নোট হলে যতটা জায়গা লাগবে, ৫০০ টাকার নোটে তার থেকে অনেকটা বেশি জায়গা লাগবে। তাই যারা চোরা কারবার করে, যারা ঘুষ নেয় তারা আপত্তি করবেন এটাই স্বাভাবিক।’
একইসঙ্গে ২০১৬ সালের নোটবন্দির সিদ্ধান্তের সঙ্গে এবারের ২০০০ টাকার নোট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের তুলনা টানাও একেবারেই উচিত নয় বলে মনে করেন অশোক লাহিড়ি। এই প্রসঙ্গে তিনি এও বলেন, নোটবন্দির ঘটনার সঙ্গে এই ২ হাজার টাকা নোটের প্রত্যাহারের তুলনা টানা একেবারে অবান্তর তাঁর ব্যাখ্যা, ২০১৬ সালে যখন নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন বাজারে মোট টাকার ৮৫ শতাংশ ছিল ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট। আর বর্তমানের পরিস্থিতিতে ২০০০ টাকার নোট রয়েছে বাজারের মোট টাকার মাত্র ১১ শতাংশ। এর পাশাপাশি, এখন ব্যাঙ্কে গিয়ে নোট বদলের জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ চার মাস সময় দেওয়া হয়েছে। আর অতীতে ২০১৬ সালে সময় দেওয়া হয়েছিল মাত্র সাত সপ্তাহ। বিজেপির অর্থনীতিবিদ বিধায়কের কথায়, নগদ টাকার ঘাটতি হবে বলে একটি অপপ্রচার চলছে। এতে বিভ্রান্ত হবেন না। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এই কাজ করেছে।’